Friday , 20 September 2024

এরকম উপাচার্যই প্রয়োজন আমাদের-খুবি

এরকম উপাচার্যই প্রয়োজন আমাদের।সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে, এখনো হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন প্রায় অভিভাবকশূন্য। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, ডিনরা পদত্যাগ করেছেন। কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পদাধিকারীদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।

এরকম
এরকম উপাচার্যই প্রয়োজন আমাদের-খুবি

এর ব্যতিক্রম দেখলাম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ ঠেকানোর জন্য আন্দোলন করেছেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ডেকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘সম্মান রক্ষার জন্যই আমি পদ ছেড়ে দিয়েছি।’ এই পদে থেকে অসম্মানিত হলে পরে শিক্ষক হিসেবেও ছাত্রদের সামনে মুখ দেখাতে পারব না।

এই যুগে এ রকম আত্মমর্যাদাসম্পন্ন উপাচার্য আছেন— অনেক হতাশার মধ্যেও আমাদের আশাবাদী করে তোলে।

বলছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেনের কথা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের পক্ষে দৃঢ় ভূমিকা নেন এবং ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকতে দেননি।

সে সময় উপাচার্য ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমার ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ প্রশাসন ঢুকতে পারবে না; এখানে আমিই প্রশাসন।’ তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

যেখানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে শান্তি রক্ষার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনেছেন, সেখানে মাহমুদ হোসেন দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেননি।

এটাকে ব্যতিক্রম বললেও কম বলা হবে। শিক্ষাঙ্গনে যখন নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাধিকারীরা সরকারের মন রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন মাহমুদ হোসেন একা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় বাইরের কারও প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলেও ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশকে ঢুকতে দেননি। এ জন্য ছাত্ররা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় সেখানে ছাত্রলীগ দৌরাত্ম্য দেখাতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যাঁরা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত ভেবেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা নানা রকম সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মাহমুদ হোসেন সেই চেষ্টা করেননি। বরং শিক্ষার্থীদের অনুরোধ রক্ষায় অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন মাহমুদ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। তাঁর বাবা মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু তিনি উপাচার্য হয়েছেন নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায়।

তাঁর ১০৫টি গবেষণা নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। দেশি ও বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে ২৬টি গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগ ও নেতৃত্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের মধ্যে প্রথম সয়েল আর্কাইভ স্থাপন হয়েছে।

মাহমুদ হোসেন ১৯৯৯ সালে শিক্ষক হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০০১ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক, ২০০৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৯ সাল থেকে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনে এখন পর্যন্ত অধ্যাপক পদে দায়িত্বরত আছেন। মাহমুদ হোসেন মালয়েশিয়ার পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানগ্রোভ ইকোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

পদত্যাগপত্রে মাহমুদ হোসেন পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেছেন। আসলে কারণটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত নয়। শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল তিনি পদে থাকুন, কিন্তু তাঁরন সহযোগী সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ করতে হবে। মাহমুদ হোসেন মনে করেন, সহযোগীদের ছাড়া তিনি প্রশাসন চালাতে পারবেন না। মাহমুদ হোসেনসহ ৬৭ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আরও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।

গত রোববার প্রথম আলোয় ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন পদত্যাগ করছেন’ খবর প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সমবেত হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ ঠেকাতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন এলাকায় তাঁরা তাঁর পক্ষে নানা স্লোগানও দেন। যখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন,তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এ থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা যে কত বেশি সেটা ধারণা করা যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী একরামুল হক বলেন, ‘আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাননি। কিন্তু উপ-উপাচার্যসহ অন্য সবার পদত্যাগ চেয়েছেন। ফলে ওই অবস্থায় তিনি দায়িত্ব পালন করা ঝুঁকির ও অসম্মানজনক হতে পারে বলে মনে করেছেন। এ কারণে সবার সঙ্গে তিনিও পদত্যাগ করেছেন।’

পদত্যাগের আগে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আল এহসানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহমুদ হোসেন বলেছিলেন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি পরিহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা না বাড়িয়ে লেখাপড়ার মান বাড়ানোর ওপর জোর দেন এই শিক্ষাবিদ।

উপাচার্য হওয়ার পর সাধারণত কেউ ক্লাস নেন না। কিন্তু মাহমুদ হোসেন নিয়মিত ক্লাস নিতেন। ছাত্রদের নিয়ে ফিল্ডে যেতেন। ছাত্রদের গবেষণা তদারক করতেন। উপাচার্য থাকা অবস্থায় তিনি ছয়জন পিএইচডি গবেষকের তত্ত্বাধায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকতে না দিয়ে মাহমুদ হোসেন নিঃসন্দেহে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর এই ভূমিকা পাকিস্তান আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহার আত্মদানের কথা মনে করিয়ে দেয়। উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের সময় সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করলে তিনি তাদের বাধা দিয়ে বলেছিলেন, ‘ছাত্রদের আগে আমাকে গুলি করতে হবে।’ এরপর সেনাবাহিনী সেদিন তাঁকে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। শামসুজ্জোহা ইতিহাস হয়ে যান।

এবারের ছাত্র–জনতার আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে ফেসবুকে অধ্যাপক শামসুজ্জোহার কথা স্মরণ করে লিখেছিলেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক যাঁরা ছিলেন সবাই তো মারা গেছেন, কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।’এরপর আবু সাঈদও ইতিহাস হয়ে গেলেন।

শামসুজ্জোহা ছাত্রদের বাঁচাতে জীবন দিয়ে আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আর মাহমুদ হোসেন উপাচার্য ক্যাম্পাসে পুলিশকে ঢুকতে না দিয়ে তাঁর শিক্ষার্থীদের রক্ষা করেছেন। মহত্তম দৃষ্টান্তই বটে।

  • সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি
  • সুত্রঃপ্রথম আলো।

 

সাভারে শেখ হাসিনাসহ ১২৬ জন হত্যা মামলার আসামি

ঢাকা র ১৫ থানায় নতুন ওসি

 

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধ রাখার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *