Thursday , 19 September 2024

কলকাতা ভ্রমণের শুরু-শেষ

কলকাতা প্রথম বিদেশ ভ্রমণ হিসেবে বেশিরভাগ বাংলাদেশিই যান। বৃহত্তম শহর ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা শীর্ষ গন্তব্যের তালিকায় শীর্ষে থাকে সবসময়। ২০২৪ সালে আপনারও কলকাতা যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, এই লেখাটি আপনার জন্য।

কলকাতা
কলকাতা ভ্রমণের শুরু-শেষ

তিলোত্তমা শহর কলকাতা
কী নেই এই শহরে! আছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য, গঙ্গা, হাতে টানা রিকশা, ট্রাম থেকে শুরু করে ইতিহাসের গল্প বলা অসংখ্য রাস্তা। ধর্মতলা থেকে কলেজস্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট থেকে হাওড়া ব্রিজ- সবখানেই তো ছড়িয়ে আছে শতবর্ষী সব স্থাপনা, শতবর্ষের ইতিহাস। ৩৩৩ বছরের পুরোনো এই শহর আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তাইতো কলকাতাকে বলা হয় ‘সিটি অব জয়’ বা ‘আনন্দ নগরী’।

হুগলীর তীরে জব চার্নকের হাত ধরে গড়ে ওঠা এই শহরেই জন্মেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসুসহ আরো অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। বহু প্রাচীনকাল থেকেই ঐতিহাসিক স্থাপত্য, হাওড়া ব্রিজ, দুর্গাপূজা, স্ট্রিট ফুড, সর্বোপরি রসগোল্লা ও কলকাতা বিরিয়ানির টানে নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন এখানে।

প্রথমবার এসে আপনি কী দেখবেন কলকাতায়?

কলকাতাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেখার বহু উপকরণ। পায়ে হেঁটে কিংবা বাস, ট্রাম, মেট্রোয় ঘুরে নিতে পারেন শহরের নানা স্থান।

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম: এশিয়ার অন্যতম এক প্রাচীন জাদুঘর এটি। তিমি, ডাইনোসর সহ নানা প্রাণীর জীবাশ্ম কঙ্কাল, পুরোনো সাম্রাজ্যের ব্যবহৃত নানা জিনিস, মিশরীয় মমি যদি চোখের সামনে দেখতে চান তবে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন এখানে।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়: কলকাতার জোড়াসাঁকোতে এই ঠাকুর পরিবারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। বর্তমানে এখানে একটি মিউজিয়াম ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বাঙালির কাছেই এটি পুণ্যভূমি।

কলেজ স্ট্রিট: বইপ্রেমী বাঙালি বারবার ছুটে যান এই বই পাড়ায়। প্রায় এক মিলিয়ন বর্গফুট এলাকা নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের বাজার কলেজ স্ট্রিট। ভারতের বৃহত্তম প্রকাশনা সংস্থার আবাসস্থল এটি। এছাড়াও এখানে রয়েছে হিন্দু কলেজ, হিন্দু স্কুল, সংস্কৃত কলেজ, মেডিকেল কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কফি হাউসের মতো নানা বিখ্যাত হেরিটেজ।

আলিপুর চিড়িয়াখানা: এখানে আছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, আফ্রিকান সিংহ, জাগুয়ার, জলহস্তী, গন্ডার, জেব্রা, জিরাফ, এমু পাখি, হাতি, অস্ট্রিচ, হরিণ সহ দেশ বিদেশের নানা পাখি ও বানর। শিশুদের জন্যে এটি একটি আদর্শ ভ্রমণ স্থল।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল: শ্বেত পাথরের তৈরি ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে একটি প্রদর্শনীশালা। তবে অতিরিক্ত দূষণের কারণে শ্বেত পাথরে লেগেছে এখন মলিনতার ছোঁয়া।

সায়েন্স সিটি: বিজ্ঞান সংগ্রহশালাটিতে রয়েছে- স্পেস এক্সিবিশন, ডায়নামোশেন, আর্থ এক্সপ্লোরেশন, মেরিটাইম সেন্টার ও সায়েন্স পার্কসহ আরো অনেককিছু।

হাওড়া ব্রিজ: শত ইতিহাসের সাক্ষী এই ব্রিজ দাঁড়িয়ে আছে হুগলী নদীর উপর। উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন এটি। নকশা, উপকরণ ও বাস্তবায়নের অভিনবত্বের জন্য এটি এখনো দর্শনার্থীদের আগ্রহের শীর্ষে। এছাড়া কাছেই রয়েছে জেমস প্রিন্সেপ ঘাট।

এছাড়াও নাখোদা মসজিদ, বেলুড় মঠ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, প্রিন্সেস ঘাট, ফোর্ট উইলিয়াম, বিশ্ব বাংলা গেট, নিউটাউন কফিহাউস, হরিনালয়, নজরুল তীর্থ দেখে নিতে পারেন।

ভালোবাসার শহর, প্রেমের শহর

অনেকের মতে, কলকাতা ভালোবাসার শহর। এ শহরের অলি গলি, উত্তর কলকাতার পুরানো বাড়ি, গঙ্গার ঘাট, হাওড়া ব্রিজ, হলুদ ট্যাক্সি আপনাকে বারবার এ শহরে আসতে বাধ্য করবেই। শপিং করতে পারেন নিউ মার্কেট, বড়ো বাজার থেকে। তবে গঙ্গায় নৌকা বিহার, উত্তর কলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা সাথে মাছের চপ আর হলুদ ট্যাক্সিতে করে শহর ঘুরে দেখতে ভুলবেন না যেন।

এই শহর সিনেমারও। শুক্রবার নতুন কোনো ছবি রিলিজ করলে অ্যাডভান্স টিকেটের জন্য লম্বা লাইন পড়তো। আর তা উত্তম সুচিত্রার বা উত্তম সুপ্রিয়া দেবীর হলে সেই প্রথম শো’এর জন্য আগ্রহী মানুষের ভিড় ছিল দেখার মতো। এখন হয়তো সেই ভিড় নেই, তবে নস্টালজিয়া মনকে নিয়ে ঢুঁ মেরে আসুন সিনেমা হলে।

ভোজন রসিকদের জন্য

শুধু প্রেমে নয় কিংবা জায়গায় নয়, বৈচিত্র্য রয়েছে কলকাতার খাবার-দাবারেও। কোথাও চাইনিজ তো কোথাও মোগলাই খানা, কোথাও আবার মাছ ভাতের বাঙালিয়ানা। সবমিলিয়ে জমজমাট কল্লোলিনী কলকাতা। আপনার মন গেয়ে উঠবে ‘আমি কলকাতার রসগোল্লা’।

স্ট্রিট ফুডের জন্যেও এই শহর বিখ্যাত। সকাল থেকে রাত রাস্তার ধারে, কেবিনে দেখা মিলবে মোমো, ফুচকা, রোল, কাবাব, সিঙ্গারা, চপ, কাটলেট, বিরিয়ানি, স্যুপ, ঘুগনি সহ নানা মুখরোচক সব খাবারের যা দেখে লোভ সংবরণ করা দুঃসাধ্য।

পাঁচদিনে কলকাতা

প্রথম দিন
বাস/ট্রেন/প্লেন এ চেপে কলকাতা পৌঁছাবেন। চেষ্টা করবেন সকাল সকাল কলকাতা থাকতে। তাহলে হাতে বেশি সময় পাওয়া যাবে। হোটেলে চেকইন করে হালকা রেস্ট। কলকাতা মিউজিয়াম দেখে নিউমার্কেট যেতে পারেন।

দ্বিতীয় দিন
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, সায়েন্স সিটি ভ্রমণ।

তৃতীয় দিন
হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া রেল স্টেশন, ইডেন গার্ডেন, ময়দান ভ্রমণ।

চতুর্থ দিন
সারাদিন শপিং করতে পারেন অথবা আরো কিছু স্পট দেখে নিতে পারেন।

পঞ্চম দিন
ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা।

কীভাবে যাবেন কলকাতা

ঢাকা থেকে ৩০০ কিলো দূরত্বে কলকাতা যাবার জন্য রয়েছে নানা ব্যবস্থা। বিমান, ট্রেন, বাস বা নতুন চালু হওয়া জাহাজে করে যেতে পারেন ঐতিহ্যের শহর কলকাতায়। তবে অবশ্যই আগে ভিসার আবেদন করে ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে তারপরই যাতায়াতের মাধ্যম ঠিক করে টিকেটের ব্যাবস্থা করতে হবে।

বিমানের ক্ষেত্রে কলকাতায় যাওয়ার জন্য গুনতে হবে ৪০০০- ৮০০০ টাকা, আর সময় লাগে ৪৫-৫০ মিনিট। বাসের ক্ষেত্রে শ্যামলী, বিআরটিসি, সৌহার্দ্য দিনের বেলায় সরাসরি ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। ভাড়া ২০০০-২২০০টাকা। এছাড়া ট্রেনে যেতে পারেন মৈত্রী এক্সপ্রেসে, সকাল ৮.১০ মিনিটে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছাড়ে।

ঢাকা থেকে নৌ পথেও যাওয়া যায় এখন কলকাতায়। ভ্রমণ পিপাসুরা সর্বোচ্চ ১৫,০০০ (ফ্যামিলি স্যুট) থেকে সর্বনিম্ন ১৫০০ (সুলভ/ডেক) টাকা খরচে নতুন চালু হওয়া এমভি মধুমতি জাহাজে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে পারবেন।

কলকাতায় থাকার জন্যে রয়েছে অনেক হোটেল ও গেস্ট হাউজ। কলকাতার নিউমার্কেট, মারকুইস স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, রফি আহমেদ রোডে রয়েছে অনেক হোটেল। সাধারণত মোটামুটি মানের নন এসি রুমের ভাড়া ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে এবং এসি হোটেলের ভাড়া ১৪০০ রুপির উপরে। যদি একান্তই বাজেটের মধ্যে হোটেলে থাকতে চান এবং খুব কম খরচে থাকতে চান তাহলে মারকুইস স্ট্রিট ও মির্জা গালিব স্ট্রেটে বেশ কিছু হোটেল আছে তুলনামূলক কম খরচে থাকতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন গেস্ট হাউজ ও ডর্ম গুলোতে বাজেটের মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন।

ঘুম ভাঙার পর যেসব কাজ ঠিক নয়

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব

Spread the love

Check Also

ডিম

প্রতি দিন দুটো সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরের কী কী ঘাটতি মিটবে?

পুষ্টিবিদেরা বলছেন ডিম খাওয়া বা না-খাওয়া নির্ভর করবে যিনি খাচ্ছেন, তাঁর স্বাস্থ্যের উপরে। কিন্তু এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *