Thursday , 19 September 2024

ফাটা !পায়ের গোড়ালি ফাটা কেন হয় এবং এর প্রতিরোধে করণীয়?

ফাটা পায়ের গোড়ালি”‘

পা ফাটা শীতের একটি কমন রোগ।শীত এসেছে আর পায়ের গোড়ালি ফাটেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ বিরল। পায়ের গোড়ালি ফাটা এর কারণে সমস্যা যে শুধু সৌন্দর্য ক্ষুণ্ণতার, তা কিন্তু নয়। বরং এই গোড়ালি ফাটা অনেক ক্ষেত্রেই হতে পারে অন্য কোনো লুকানো রোগের লক্ষণ। এছাড়াও ফেটে যাওয়ার কারণে ব্যথা হওয়া বা চলাফেরায় অসুবিধা হওয়া তো আছেই। শীতের আগমন বার্তা পেলেই তাই বেশ সচেতন হয়ে যান, সারাবছর স্কিন কেয়ার না করা মানুষটিও এই সময় রাতে একবার, দুপুরে একবার নিয়ম করে পুরু লেয়ারে ভ্যাসলিন বা লোশন লাগিয়ে নেন পায়ে। কিন্তু সমাধান তো তখনই হবে যখন আসল কারণ খুঁজে সেই অনুযায়ী সমাধানের পথে যাওয়া হবে। তাই চলুন আগে বিজ্ঞান কী বলে পা ফাটার কারণ নিয়ে সেগুলো জেনে আসি, এরপর সমাধানটাও বের করি।

ফাটা
ফাটাপায়ের গোড়ালি ফাটা কেন হয় এবং এর প্রতিরোধে করণীয়

পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ

পা ফাটার সমস্যা আজকে নতুন নয়। আপনি, আমি বা আমাদের পরিবারের মোটামুটি সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। ছেলে হোক বা মেয়ে, সবার জন্য এই সমস্যা কমন। পা ফাটলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, পা ঢাকা জুতো ছাড়া তখন বাইরে বেরোনোটাও দায় হয়ে যায়। পা ঢেকে না হয় লোকলজ্জা এড়ানো গেলো কিন্তু সমস্যা তো এড়াতে পারছেন না। তাই চলুন আগেভাগে জেনে আসি কারণগুলো কী।

ডিহাইড্রেশন
পা ফাটার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডিহাইড্রেশন। শরীরে যখন পানিশূন্যতা হবে তখন স্বাভাবিকভাবেই পা ফাটবে, এছাড়াও অতিরিক্ত শুষ্ক পরিবেশে থাকার কারণেও পায়ের চামড়া ফেটে যেতে পারে।

নিউট্রিশনের অভাব
শরীরে নিউট্রিশনের অভাব হলে সেটাও পা ফাটার একটা কারণ হতে পারে। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য। আমাদের ত্বকের জন্য ভিটামিন বি ও সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই যখন এই দুই ভিটামিন শরীরে কমে যায় তখন স্বভাবতই তার প্রকাশ পায় পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়ার মাধ্যমে।

বাহ্যিক পরিবেশ
দীর্ঘসময় ধুলোবালির মধ্যে কাজ করা, ক্ষেত খামারে কাজ করা এগুলোর কারণেও পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে৷

ব্যক্তিগত অভ্যাস
দীর্ঘসময় খালি পায়ে কাজ করা পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। খালি পায়ে কাজ করলে ত্বকে ঘর্ষণের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে পা ফেটে যায়। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ জুতা না পরা, শক্ত জুতা পরাও পা ফেটে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

পা ফাটার পিছনে থাকতে পারে কিছু রোগ
এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু রোগের কারণে পা ফাটা দেখা দিতে পারে। এসব রোগগুলো আমাদের খুব পরিচিত না বলে আমরা সেভাবে এগুলোর ব্যাপারে কথা বলি না, কিন্তু এসব ব্যাপারে না জানা হতে পারে পা ফাটা থেকেও বড় কোনো রোগের সূচনা।

পামোপ্ল্যান্টার কেরাটোডার্মা
এই রোগটি জিনবাহিত। এই রোগের ক্ষেত্রে রোগীর চামড়া পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। পুরু ও শক্ত চামড়া খুব সহজেই ফেটে যায়। ফাটা জায়গা দিয়ে রক্ত বের হওয়া তো খুব স্বাভাবিক। তবে মূল সমস্যা যেটা হয় তা হলো এই ফাটা জায়গা দিয়ে বিভিন্ন জীবাণু শরীরের মধ্যে ঢোকে আর সে থেকে শুরু হয় নানা ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ।

সোরিয়াসিস
এটি একটি অটো ইমিউন রোগ, এই রোগের ক্ষেত্রে ত্বকের উপরিভাগে চাকা চাকা হয়ে যায়, প্রচন্ড চুলকানি হয়, চামড়া ওঠে। হাতের বা পায়ের তালুতে যদি সোরিয়াসিস হয় সেক্ষেত্রে চামড়া উঠে যায় এবং ভেতরের লালচে মাংসপেশি দেখা যায়।

পিটিরিয়াসিস রুব্রা পিলারিস
এই রোগটি জিনঘটিত, সোরিয়াসিসের মতো এটাতেও চামড়া উঠে যায় এবং চুলকানি হয়।

ক্র্যাক হিল প্রতিরোধের উপায়
পা ফাটা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একমাত্র ও প্রধান কাজ হলো পা পরিষ্কার ও মসৃণ রাখা। এটি নিশ্চিত করতে পারলেই প্রতিরোধ হবে অনাকাঙ্ক্ষিত পা ফাটা। কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে কিছু ধারণা দেওয়া হলো নিচে-

  • ১. খালি পায়ে চলাফেরা না করা।
  • ২. এমন জুতা পরিধান করা যেটা একইসাথে নরম ও আরামদায়ক।
  • ৩. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। যারা এসি রুমের মধ্যে বেশিরভাগ সময় থাকেন তাদের জন্য এই ধাপ আরও সতর্কতার সাথে পালনীয়।
  • ৪. গোসলের পরে বা পা ধোয়ার পরে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে ফুট ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা। চাইলে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলও মালিশ করতে পারেন। এতে করে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হবে।
  • ৫. ঝামা পাথর বা পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের ত্বকের ডেড সেল বা মরা কোষগুলোকে পরিষ্কার করে ফেলা এবং পা ধুয়ে নেয়ার পরে নারকেল তেল/অলিভ অয়েল/ভালো ব্র‍্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা।
  • ৬. পা ফাটার সমস্যা বেশি হলে রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে ভ্যাসলিন লাগিয়ে মোজা পরে ঘুমানো।
  • ৭. শীতের আমেজ শুরু হলেই পায়ে মোজা পরার অভ্যেস শুরু করে দিন, এতে করে শুষ্ক আবহাওয়া থেকে ও ধুলোবালি থেকে ত্বক রক্ষা পাবে।

ক্র্যাক হিল রোধে কিছু ঘরোয়া উপায়
খুব জলদি দুটো ঘরোয়া উপায় দেখে নিই চলুন। এই উপায়গুলো পা রাখবে সুন্দর, মসৃণ এবং সাথে পা ফাটাকে রাখবে আপনার থেকে বেশ দূরে।

  • ১. একটি বালতি নিয়ে এর অর্ধেকটা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভরে ফেলুন, পানির তাপমাত্রা যেন আপনার সহনীয় মাত্রার মধ্যে থাকে সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। এরপর এতে কয়েক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন আধঘন্টা। এতে করে পায়ের চামড়া নরম হবে, একইসাথে হাইড্রেটেড থাকবে।
  • ২. একটি বাটিতে সমপরিমাণে গ্লিসারিন ও গোলাপজল নিয়ে নিন। ভালোভাবে দুটি উপাদান মিশিয়ে নিয়ে পায়ে লাগিয়ে রেখে দিন সারারাত, সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। গ্লিসারিন ত্বককে মসৃণ করে। গোলাপজলে আছে নানা অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, যা ত্বকে পুষ্টি জোগায়।

নিজেকে ভালোবাসলে ও আগে থেকেই একটু সচেতন হলে পায়ের গোড়ালি ফাটা সহ সব ধরনের সমস্যা দূরে থাকবে আপনার ত্বক থেকে। তাই প্রচুর পানি পান করুন এবং ত্বককে দিন সেই ভালোবাসাটুকু যেটা আপনার ত্বক ডিজার্ভ করে।

সূত্রঃSHAJGHOR

বৈশাখী দুপুরে প্রাণ জুড়ানো “কাঁচা আমের শরবত”

আরো জানতে ভিজিট করুন

ফেসবুক পেজ

Spread the love

Check Also

রুটি

রুটি গ্যাসের আগুনে ছেঁকে খেলেই কি সমস্যা হয়?

বাঙালির প্রথম পছন্দ হলো ভাত। এই খাবার সারা দিনে একবার না খেলে মনটা কেমন কেমন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *