Thursday , 19 September 2024

বন্যা মোকাবিলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার দুই দেশের

বন্যা মোকাবিলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। দীর্ঘ সময় ধরে পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, নদী ব্যবস্থাপনা ও নদীশাসন নিয়ে কাজ করছেন বুয়েটের এই সাবেক অধ্যাপক। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ইউনিয়নের (আইইউসিএন) বাংলাদেশ প্রতিনিধিও ছিলেন তিনি। দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ।

বন্যা
বন্যা মোকাবিলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার দুই দেশের

ফেনী-কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে। এর কারণ কী?

বাংলাদেশ একটি ভাটির দেশ। উজানে ভারত, নেপাল ও চীনের অবস্থান। দেশভাগের সময় পাহাড়ি এলাকাগুলো বাংলাদেশের বাইরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সমতল অংশে পড়েছে। ফলে উজানে পাহাড়ি ঢল থেকে আসা পানি হচ্ছে আমাদের বন্যার জন্য মূলত দায়ী। বন্যার পানির ৯২ শতাংশ সেখান থেকে আসে। এই বাস্তবতাকে মাথায় নিয়ে আমাদের বন্যা পরিস্থিতিকে দেখতে হবে।
বন্যা শুরুর আগে ভারতের ত্রিপুরায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আগস্টে ভারতের ওই রাজ্যে বড়জোর ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এবার তিন দিনে এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেটেও স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সমস্যাটি হয়েছে বৃষ্টিপাতের সময়ব্যাপ্তি নিয়ে। সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে সিলেটের উজানে একইভাবে অতি ভারী বৃষ্টি হয়। ওই সময়টা শুষ্ক মৌসুমের ঠিক পরে হওয়ায় নদী-হাওর ও জলাশয়গুলো শুকনো থাকে। ফলে ঢলের পানি হাওরের বাইরে খুব বেশি যায় না। কিন্তু আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে সব নদী-খাল পানিতে টইটুম্বুর। এ সময় এমন অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা অস্বাভাবিক রূপ নেয়।

অভিযোগ আছে, ভারত ত্রিপুরায় বাঁধ খুলে দেওয়ায় তীব্র বন্যা হয়েছে।

ভারতের ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধের অবস্থান বাংলাদেশের ফেনী থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাঁধ খুলে দেওয়ায় তাদের দেশেও ১২০ কিলোমিটার এলাকা ডুবেছে। আর পানি বেড়ে গেলে ওই বাঁধের গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। গেট এভাবে না খুলে গেলে পুরো বাঁধ ভেঙে বাংলাদেশের দিকে নেমে আসত। সেটি আরও বড় বিপদ তৈরি করত। ফলে এগুলো মাথায় রেখে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
ত্রিপুরার ভাটিতে বাংলাদেশের যে নদীগুলো আছে, তা অপেক্ষাকৃত সরু। আর ওই এলাকায় অনেক ছোট ছোট নদী রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে বসতি বেশি। প্রচুর অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। ফলে উজান থেকে ঢল নামার সময় পানি এসব বসতি এলাকায় দ্রুত প্রবেশ করেছে, ডুবিয়ে দিয়েছে। যে কারণে বন্যার তীব্রতা আমাদের কাছে বেশি মনে হচ্ছে।

দেশের উত্তরাঞ্চল ও হাওরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অবকাঠামো রয়েছে। পূর্বাঞ্চলের যেখানে এবার বন্যা হলো, সেখানে তা কেমন?

কুমিল্লার গোমতী নদীর উজানের বাংলাদেশ অংশে বাঁধ রয়েছে। এগুলো প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। স্থানীয় মানুষ তা তৈরি করেছিল। উপকূলীয় ও হাওরের বাঁধগুলো মূলত ছিল অষ্টমাসি। মানে বর্ষা আসার আগপর্যন্ত ফসল চাষ করার জন্য এসব বাঁধ দেওয়া হতো। বর্ষার ঢল আসার পর তা কেটে দেওয়া হতো। কিন্তু গত কয়েক যুগে গোমতীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কথা মনে করতে পারছি না। এবার বন্যায় তা ভেঙেছে। ভাঙার আগপর্যন্ত তা অনেক এলাকাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করেছে।
কাপ্তাই বাঁধ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে, এটা যেমন ঠিক। কিন্তু ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের কারণে রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের বিশাল এলাকা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এর বাইরে ওই এলাকায় বন্যার পানি আটকানোর মতো কোনো বড় অবকাঠামো নেই। এই বন্যা থেকে আমাদের এই শিক্ষা নিতে হবে যে শুধু উত্তরাঞ্চল বা হাওর নয়। দেশের পূর্বাঞ্চলের ওই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।

ভারতের কাছ থেকে আমরা বন্যার পর্যাপ্ত তথ্য পাই না, যা পাই তা দিয়ে সঠিক ও নিখুঁত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এমনটা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর ১৯৭২ সালে আমরা দুই দেশ মিলে যৌথ নদী কমিশন গঠন করি। ওই কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের যে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে, তার পানি বণ্টন এবং বন্যা মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনার শুরু হয়। কিন্তু তখন শুধু গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কোথায় বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে, সেই তথ্য ভারত থেকে পাওয়া যেত। স্বাধীনতার পর ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। তারপর অন্য নদ-নদীগুলোর পানিপ্রবাহের তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে জানানো হয়।
সিলেটের উজানের নদ-নদীগুলোর তথ্য আমরা পেলেও ফেনী-কুমিল্লার উজান থেকে শুধু পানি বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোনো তথ্য আমরা ভারত থেকে পাই না। আমি যৌথ নদী কমিশনের সদস্য থাকা অবস্থায়ও সব কটি অভিন্ন নদ-নদীর তথ্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করেছি। আমরা এটাও বলেছি, আপনারা আমাদের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে আসেন, আমরা আপনাদের ওখানে যাই। দুই দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা মিলে যৌথভাবে বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য আদান-প্রদান করি। এতে দুই দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উপকার হবে।

দুই দেশেরই যদি উপকার হয়, তাহলে তা হচ্ছে না কেন?

বন্যার পানির আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ঐকমত্য হয়েছে। দুই দেশের অবস্থান একই নদীর অববাহিকায়, নদীর পানি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণের জন্য আমরা একই সফটওয়্যার ব্যবহার করি। আর নদীর তথ্য বিনিময় করলে কোনো দেশের ক্ষতি নেই, বরং লাভ। আমরা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এ ব্যাপারে একমত হয়েছি। কিন্তু যখনই এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের জন্য রাজনীতিবিদদের কাছে যাই, তখনই তা আটকে যাচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে দুই দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার।

ওই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কীভাবে সম্ভব?

উজান ও ভাটি অঞ্চলের নদীগুলোর পানিপ্রবাহের তথ্য নিয়ে ভারতের রাজ্যভিত্তিক দ্বন্দ্ব আছে। সিকিমের উজানে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সেচ প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ঝামেলা বহু বছরের। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের সঙ্গেও ভারতের নদীর পানি বণ্টন ও পানি প্রবাহের তথ্য নিয়ে অনেক ধরনের সমালোচনা আছে।
বাংলাদেশের পানিসম্পদ উপদেষ্টা ভারতের কাছ থেকে বন্যার আগাম পূর্বাভাসের তথ্য নিয়ে কথা বলেছেন। আমি তাঁর স্পিরিটের সঙ্গে একমত। ভারতের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আরও তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো 

   বর্ষার দিনে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

হত্যা

চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের অতিথিকক্ষে

চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে আটকে রেখে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *