Thursday , 19 September 2024

মালয়েশিয়া থেকে ভগবানপুর এসে আটকা পড়লেন বন্যায়

মালয়েশিয়া থেকে ভগবানপুর এসেছিলেন তাজুল ইসলাম।১০ বছর আগে দেশ ছেড়েছেন তাজুল ইসলাম। বিশেষ একটা ইচ্ছা নিয়ে এবার দেশে এসেছিলেন এই মালয়েশিয়াপ্রবাসী। কী সেই ইচ্ছা, জানতে চাইলে সলজ্জ হাসি দিলেন, ‘বিয়ের বয়স হইসে তো!’ ৩০ বছরের তাজুল এবার তাই ‘রিটার্ন টিকিট’ না কেটেই দেশে এসেছিলেন। কত দিন কী লাগে, সেসব বুঝেই ফেরার টিকিট কাটতে চেয়েছিলেন। দুই মাস আগে দেশে এসে দেখেন সারা দেশে অস্থিরতা। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হলো। পাঁচ ভাই–বোনের মধ্যে ছোট তাজুল ভেবেছিলেন, দ্রুত চলে যাবেন। লাগেজও গুছিয়ে ফেলেছিলেন। এর মধ্যেই আগস্টের শেষে আরেক দুর্যোগের মুখে এসে পড়লেন।

মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া থেকে ভগবানপুর এসে আটকা পড়লেন বন্যায়

বন্যার পানিতে যেকোনো দিন নিজেদের ঘরবাড়ি ডুবে যেতে পারে, সেটা ভাবনায়ও ছিল না। তাজুলদের গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক যে মানুষ, তিনিও কোনো দিন এমন পানি দেখেননি। ফেনী জেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে তাজুল ইসলামের বাড়ি। পুরো গ্রামে ৭০টি পরিবারের বসবাস।

গত ২৮ আগস্ট তাজুলের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন ভরদুপুর। ভাদ্র মাসের পিঠপোড়া রোদে চোখ মেলে তাকানো যাচ্ছে না। ফেনীর বিরলী বাজারের কাছে ভাঙাচোরা সড়কে হাঁটুপানির মধ্যে আমাদের ত্রাণের ট্রাক থামানো। নৌকা নিয়ে এসে থামলেন তাজুল ও কাওসার। তাজুলকে দেখে বোঝার উপায় নেই, আগে তিনি কোনো দিন নৌকা চালাননি। তাঁদের নৌকায় প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণাসামগ্রী তুলে ভগবানপুর গ্রামের দিকে রওনা হলাম আমরা। নৌকায় যেতে যেতে গল্প জমে গেল।

তাজুল জানালেন, এই এক সপ্তাহ ধরে নৌকা চালাতে চালাতে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। গ্রামটির বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে। অনেকে প্রবাসী। তবে কারোরই কৃষিকাজে নৌকার দরকার হয় না। কারণ, সেখানকার বিলে তো পানিই জমে না। এই নৌকা তবে কোথায় পেলেন? জানতে চাইলে তাজুল বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কিছু জেলে পরিবার আছে, যাঁরা নদীতে মাছ ধরতে যান। তাঁদেরই একজনের নৌকা। এমন দু–তিনটা ছোট্ট ডিঙি নৌকা আছে জেলেদের কাছে। বন্যার পর তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো আমরা নিয়ে এসেছি পুরো গ্রামের কাজে লাগাতে।’

আমরা গল্প করছি, আর তরতর করে নৌকা চালাচ্ছেন তাজুল ও কাওসার। বন্যার পানিতে থই থই বিল। ছোট ছোট ধানের চারা কেবল লাগানো হয়েছিল, এখন যা একজন মানুষের সমান পানিতে তলিয়ে আছে। এই বিলের পর আরও একটি বিল পাড়ি দিয়ে তবেই আমরা তাঁদের গ্রামে পৌঁছাব। তা প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যাবে। পানির কারণেই গ্রামটি এখন হয়ে গেছে ‘দূরের পথ’।

সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কোনো সংগঠনই সেখানে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য যেতে পারছে না। বন্যার পানি গ্রামে ঢোকার পরই তাজুল ভেবেছিলেন তিনি দ্রুত বিদেশে ফিরে যাবেন। লাগেজ তো গোছানোই আছে! তবে রাতে সিদ্ধান্ত বদলালেন।

দুই দিন পানিবন্দী থেকে তাজুল তাই ভাবলেন, গ্রামের জন্য কিছু একটা করা দরকার। এভাবে চলতে থাকলে অনেক পরিবারই না খেয়ে মারা পড়বে। সমবয়সী তরুণদের কয়েকজনকে ডেকে প্রথম দুই দিন শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করলেন। কিরণ, জায়েদ, নোবেল, সাগর, ফাহিম, মাহির মতো অনেক তরুণই এগিয়ে এলেন। তাঁরা বসে পুরো গ্রামের সবগুলো পরিবারের নামধাম নোট করলেন। এরপর নানা দিকে ত্রাণের খোঁজে ছুটতে শুরু করলেন। আর তাঁদের এই ছোটাছুটির কাজে জেলেপাড়ার নৌকা দুটি খুব কাজে দিল।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী করব। এরপর নিজের পরিচিতদের বলতে শুরু করলাম, আমাদের গ্রামে ত্রাণ দেন। পানির কারণে কেউই আসতে পারে না। তাই নিজেরা নৌকা নিয়ে তাঁদের কাছে যেতে শুরু করলাম।’ বিলের মাঝ থেকে দূরের একটি বিদ্যুৎ স্টেশন দেখিয়ে তাজুল বলেন, ‘ওইখানে অনেক চায়নিজ কাজ করেন। এর মধ্যে এক ইঞ্জিনিয়ার আছেন আমার পরিচিত। তাঁকে জানানোর পর গ্রামের জন্য তাঁরা এক দিনের ত্রাণ দিলেন। এক জায়গা থেকে আরেক দিন এলো রান্না করা বিরিয়ানি। এভাবেই যেখান থেকে যা পাচ্ছি পুরো গ্রামের মধ্যে বণ্টন করে দিচ্ছি।’

প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা যখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ দেওয়ার জন্য নানাভাবে যোগাযোগ করছিলেন, সেভাবেই এই গ্রামের খোঁজ মেলে স্থানীয় সাংবাদিক শাহজালালের মাধ্যমে। গল্প করতে করতে আমরা এসে পৌঁছালাম গ্রামের প্রবেশমুখে খালপাড়ের ওপর একটি কালভার্টের কাছে। আগে থেকেই সেখানে আরেকদল তরুণ অপেক্ষায় ছিল। কীভাবে কী বণ্টন করতে হবে, তাঁদের নির্দেশনা দিলেন তাজুল। তাজুল বলেন, ‘আপনাদের প্রথমে নিয়ে যাই জেলেপাড়ায়। ওখানে ১২টি পরিবার আছে। সেখান থেকেই আমরা ত্রাণ দেওয়া শুরু করতে পারি।’

আমাদের নৌকা জেলেপাড়ার গোয়ালঘর, ডুবে থাকা নলকূপ, রান্নাঘর পেরিয়ে রুপালি বর্মণের দুয়ারে এসে ভিড়ল। দুই দিন আগে তাঁর শাশুড়ি মারা গেছেন। হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা বৈষ্ণব প্রিয়বালা। পানির কারণে হাসপাতালে নিতে দেরি হয়ে যায়। সৎকার করেছেন কোথায়? পানিঘেরা প্রিয়বালার টিনের ঘরটি ইঙ্গিত করলেন রুপালি। বাড়িটির চারদিকে তখনো পানি। মাটির মেঝে থেকে পানি নেমে সারা ঘর কাদায় ভরে গেছে। সেই ঘরের ভেতরেই প্রিয়বালাকে সমাহিত করা হয়েছে। সমাধির পাশে একটি তুলসীগাছ।

এই পাড়ার অন্য পরিবারগুলো একটি পাকা ঘরে গাদাগাদি করে আছেন। কয়েকজন বাড়ির ছাদে ত্রিপল ঘিরে সেখানে থাকেন। পথের ধারে চার বছরের পুরোনো এক গাছ পড়ে পুরো গ্রামের বিদ্যুৎ–ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেই প্রথম দিনে। এই পাড়া থেকে বেরিয়ে আমরা গ্রামের অন্য এলাকায় গেলাম। বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছানো হলো। বেশির ভাগ বাড়ি তখনো পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে। কেউ খাটের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।

ত্রাণের কাজ শেষ করে সন্ধ্যার ঠিক আগে আমরা রওনা হলাম মূল সড়কের ট্রাকের দিকে। আমাদের নিয়ে এবার নৌকায় তাজুলসহ আরও কয়েকজন তরুণ। বিরলী বাজার থেকে তাঁরা এক বোতল ডিজেল কিনে গ্রামে ফিরবেন। কারণ, বিদ্যুৎ না থাকলেও জেনারেটর চালিয়ে গ্রামের মুঠোফোনগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। দেশে–বিদেশে থাকা এই গ্রামের অন্যরা যাতে পরিবারগুলোর খোঁজ রাখতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা!

সূত্রঃ প্রথম আলো।

গুচ্ছর মাইগ্রেশন বন্ধ চতুর্থ ধাপে ভর্তির তারিখ ঘোষণা

গাজায় সুড়ঙ্গ থেকে মার্কিনিসহ আরও ৬ মরদেহ উদ্ধার

 

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

মূল্যস্ফীতি

দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশে

ডলারসহ অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি উসকে ওঠা দেশগুলোর একটি ছিল শ্রীলংকা। দুই বছর আগে ২০২২ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *