Thursday , 19 September 2024

রাঙিয়ে দিয়েছে রক্তরাগ

রাঙিয়ে দিয়েছে রক্তরাগ। গ্রীষ্মে যখন বাগানে বাগানে গাছে গাছে জারুল আর কৃষ্ণচূড়া ফুলের দাপাদাপি, তখন আর রক্তরাগ ফুলের দিকে তাকানো হয়ে ওঠে না। কিন্তু না তাকালেও তার দিকে তাকাতে হয় তার উজ্জ্বল রঙের কারণে, রাঙা রঙে সে হৃদয় রাঙাবেই। বসন্ত শেষে যখন অনেক ফুলের ফোটা থেমে যায়, তখন আর যাই কোথায়? গ্রীষ্মের প্রখর রোদে যেন আগুনের ফুলকি নেমে আসে রক্তরাগ ফুলগুলোর ওপর, আরও আগুনে হয়ে ওঠে তার রূপ! বর্ষা এলেও যেন থামতে চায় না ফুল ফোটা। এ রকম বেলাজ রূপপসারী ফুল আর আছেটা কে?

রাঙিয়ে
রাঙিয়ে দিয়েছে রক্তরাগ

রক্তরাগ ফুল একসময় ঢাকার নবাবদের শাহবাগের ‘বাগ-ই-বাদশাহি’ বাগানকে রাঙাত। তখন তার পোশাকি নাম ছিল কর্ডিয়া সেবেস্তিনা। সেবেস্তিনা নামটি ইরানি। এরপর এর নাম হয় স্কারলেট কর্ডিয়া। এটি তার প্রজাতিগত নাম। স্কারলেট মানে রক্তলাল আর কর্ডিয়া নামটি জার্মান উদ্ভিদবিদ ভ. কর্ডাসের (১৫১৫-১৫৪৪) নামের স্মারণিক। গাছটি বিদেশি। তার জন্মভূমি পেরু থেকে বহু দেশ ঘুরে কোনো এক উদ্ভিদপ্রেমিকের হাত ধরে সে এসেছে আমাদের দেশে।

এক বসন্তে রমনা উদ্যানে নার্সারির ভেতরে নবাবি বাগানের সেই স্কারলেট কর্ডিয়ার একটি বয়স্ক গাছে অজস্র ফুলের দেখা পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলাম। এরপরও সেখানে বহুবার দেখতে গিয়েছি গাছটিকে। আরও গাছের দেখা পেয়েছি ঢাকায়। ঢাকা তোরণ সংস্কারের আগে তার কাছে একটি রক্তরাগগাছের দেখা পেয়েছিলাম। তবে সবচেয়ে সুরক্ষিত ও শোভাময়ী অবস্থায় এখনো টিকে আছে টেনিস কমপ্লেক্সের ভেতরের গাছ দুটি। ভবনের সামনে দেখি, প্রায় সারা বছরই দু–চারটা করে ফুল ফোটে। তবে বসন্ত থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত বেশি ফুল ফোটে। আর কয়েকটি স্কারলেট কর্ডিয়া গাছের দেখা পেয়েছি বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে। সে গাছটিও বেশ বয়স্ক। স্কারলেট কর্ডিয়া গাছের আসল সৌন্দর্য তার ফুল। কিন্তু এবার বৃক্ষমেলায় গিয়ে বরিশাল নার্সারির স্টলে দেখা হলো বিচিত্র স্কারলেট কর্ডিয়া গাছের সঙ্গে। ভেরিগেটেড এ জাতের সম্প্রতি আগমন ঘটেছে এ দেশে। ফুল একই রকম, কিন্তু স্কারলেট কর্ডিয়া ফুলের সৌন্দর্যকে যেন কিছুটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে পাতার সৌন্দর্য। পাতাগুলো একহারা সবুজ নয়, সবুজ ও সাদাটে হলুদ রঙের ছোপে ছোপানো। এর আগে এ রকম চেহারার কোনো রক্তরাগগাছ আমার চোখে পড়েনি। মনে হলো স্কারলেট কর্ডিয়া গাছেরও জাত উন্নয়নে গবেষণা চলছে, নতুন নতুন জাতবৈচিত্র্য সৃষ্টি করা হচ্ছে বিদেশে। কিন্তু আমাদের দেশে কী হচ্ছে, সে খবর জানা নেই।

স্কারলেট কর্ডিয়া (Scarlet cordia) ইংরেজি নাম, বাংলা নাম রক্তরাগ, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম কর্ডিয়া সেবেস্তিনা (Cordia sebestena), পরিবার বোরাঞ্জিনেসি। ছোট বৃক্ষ প্রকৃতির চিরসবুজ গাছ। কাণ্ড খাড়া, ডালপালা এলোমেলোভাবে ছড়ানো। বাকল ধূসর ও অমসৃণ। বাকলে লম্বালম্বিভাবে সরু ফাটল দেখা যায়। এ গাছের কাঠ সুগন্ধি ধূপ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাঠ পোড়ালে তা থেকে ধূপের মতো সুঘ্রাণ আসে। বসন্তে নতুন পাতা গজায়। পাতা ডিম্বাকৃতি থেকে উপবৃত্তাকার, উজ্জ্বল সবুজ, শিরা স্পষ্ট। থোকায় কয়েকটি ফুল একসঙ্গে ফোটে। ফুলের বোঁটা প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা, পাপড়িগুলো গোড়ার দিকে যুক্ত, অগ্রপ্রান্ত বিযুক্ত ও কোঁচকানো। একটি ফুলে ৬ থেকে ৭টি পাপড়ি থাকে। পাপড়ির রং উজ্জ্বল কমলা বা সিঁদুরে লাল। পরাগকেশর ৫ থেকে ১২টি, গর্ভকেশর একটি মাঝে থাকে। থোকা ধরা ফুল ফুলদানিতে রাখা যায়, ফুলের তোড়া বানানো যায়। কিন্তু ফুলের স্থায়িত্বকাল কম। ফুল পূজাতেও কাজে লাগে। ফল ডিম্বাকার, ছোট, মাংসল, ফলে মিষ্টি ঘ্রাণ আছে। ভেতরে একটি বীজ থাকে। বীজ থেকেও কলমের দ্বারা চারা হয়। গাছের বৃদ্ধি খুব ধীরে হয়। জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সের গাছ দুটিকে আমিও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দেখে আসছি, সে তুলনায় সে গাছের বৃদ্ধি তেমন হয়নি।

নিসর্গী দ্বিজেন শর্মা ও ড. নওয়াজেশ আহমদ দুজনই তাঁদের শ্যামলী নিসর্গ ও মহাবনস্পতির পদাবলী বইয়ে একে স্কারলেট কর্ডিয়া প্রজাতিগত নামেই বর্ণনা করেছেন। নব্বইয়ের দশকে ড. নওয়াজেশ আহমদ এ গাছকে খুঁজে পেয়েছিলেন গণগ্রন্থাগারের কাছে কোথাও। আর দ্বিজেন শর্মা সত্তরের ঢাকা শহরের কোথাও এ গাছের দেখা পাননি, দেখা পেয়েছিলেন নব্বইয়ের দশকে এসে ঢাকা ক্লাবের পাশে জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সের সামনে। তিনি শ্যামলী নিসর্গ বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে গাছটিকে অন্তর্ভুক্ত করে লিখেছেন, ‘ওই গাছ আগে ঢাকায় ছিল না। তাই শ্যামলী নিসর্গ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যদিও ভারত–উপমহাদেশীয় গাছপালা বইয়ে কর্ডিয়ার ছবি দেখেছি বহুবার। যাক, শেষ পর্যন্ত কর্ডিয়া নবপর্যায়ে ঢাকায় আবির্ভূত। অবশ্যই সুসংবাদ। সারা দেশে তার বিস্তার ঘটুক।

সূত্রঃ প্রথম আলো 

চা খাওয়ার যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *