Friday , 20 September 2024

সঠিক বিকাশে শিশুর পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব কতটা জানুন

সঠিক বিকাশে শিশুর পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক।যুগের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সময় ও চাহিদা অনুযায়ী জীবন অনেক বেশি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। এই যান্ত্রিকতার দৌড়ে পাল্লা দিতে গিয়ে মানুষ ছুটছে নগরে নগরে। ভেঙে ফেলছে যৌথ পরিবারের আত্মিক বন্ধনগুলো। তৈরি করছে একক পরিবার। যেখানে শিশুরা ছিটকে পরছে গুরুজনের আন্তরিকতার ছায়া থেকে।

সঠিক
সঠিক বিকাশে শিশুর পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব কতটা জানুন

বিশেষ করে নাগরিক জীবনে একান্নবর্তী পরিবার গুলো ভেঙে যে ছোট ছোট একক পরিবারে বসবাসের চর্চা শুরু হয়েছে এতে দাদা-দাদি, নানা-নানিকে শিশুরা পায় না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মুরব্বি বা গুরুজন ছাড়াই বেড়ে উঠছে এ প্রজন্মের শিশুরা। আর তার প্রভাব পড়ছে তাদের মানসিক সঠিক বিকাশ এর ওপর।

তারা মনে করেন, সামাজিক আচার-আচরণ, পরিবারের সবার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে আদর্শ মনুষ্যত্ব ও সুন্দর গুণাবলি সম্পর্কে শিশুরা যৌথ পরিবারে দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানির কাছ থেকেই শিখে থাকে।

যদিও বর্তমান সময়ে আধুনিক নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক কর্মসংস্থান, স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, ব্যক্তিস্বাধীনচেতা আত্মকেন্দ্রিকতাসহ নানা কারণে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার হচ্ছে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতা, মমতা, স্নেহ ও ভালোবাসা কমে গেছে।

অথচ এক সময় সুখে-দুঃখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করার প্রয়াস ছিল প্রায় সবার মধ্যে। এখন আর সেই মমতা, স্নেহ ও ভালোবাসা নেই। সন্তানরা বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ানোর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বামী-স্ত্রীর একক পরিবার গড়ে তুলছে।

এমনকি দেখা যায় একই বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকলেও কথা বা সামাজিক রীতির আদান-প্রদান হয় খুবই কম। কারণ সবাই যার যার নিজের চাকরি ও পেশা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে, প্রতিবেশী কিংবা বাবা-মারই খোঁজখবর নেওয়ার সময়ই অনেকে বের করতে পারে না।

এমন দৃশ্য যে কেবল বাংলাদেশে তা কিন্তু নয়, সারা বিশ্বেই যৌথ পরিবার এখন খুঁজে পাওয়া দায়। এমন বাস্তবতায়, সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব তুর্কুর একটি নতুন গবেষণা থেকে জানা যায়, কেবল একজন গ্রান্ডপ্যারেন্ট অর্থাৎ দাদা–দাদি, নানা–নানি শিশুর জীবনে রাখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর শক্তিশালী ভূমিকা।

গবেষণাটিতে ২০০৭ সাল থেকে ১১–১৬ বছর বয়সী ১ হাজার ৫৬৬ ইংরেজ শিশুর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই সব শিশু পরবর্তী সময়ে বড় হয়ে কী ধরনের সমস্যায় পড়েছে, কীভাবে তার মোকাবিলা করেছে, কীভাবে জীবনযাপন করেছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে নিয়ে এই গবেষণায় বিশ্লেষণ করে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়।

এসব শিশুকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দলে তারা ছিল, যারা বেড়ে ওঠার সময় অন্তত একজন গ্রান্ডপ্যারেন্টকে (দাদা–দাদি বা নানা–নানি—এই চারজনের যেকোনো একজন) পাশে পেয়েছে। দ্বিতীয় দলে ছিল তারা, যারা কাউকেই পায়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু তাদের নানা বা নানি, দাদা বা দাদির সঙ্গে বড় হয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ঘটেছে তুলনামূলক ইতিবাচকভাবে।

তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও অপর দলভুক্ত শিশুদের চেয়ে ভালো। এমনকি তাদের অসুখে ভোগার হারও ছিল কম। এসব শিশু বড় হয়ে হতাশায়ও ভুগেছে কম। এদের পরিবারিক বন্ধনও হয়েছে মজবুত। দেখা গেছে, বয়স ১৮ হয়ে যাওয়ার পরও তারা খুব কমই পরিবার ছেড়ে গেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব শিশু তাদের গ্রান্ডপ্যারেন্টের সঙ্গে থেকেছে, তাদের ওপর ‘টক্সিক প্যারেন্টিং’ ও মা–বাবার নেতিবাচক সম্পর্কের প্রভাব কম। সেসব তাদের মানসিক বিকাশে খুব কমই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব শিশু প্রযুক্তির চেয়ে মানুষে–মানুষে যোগাযোগকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। এসব শিশুর মধ্যে পরবর্তী সময়ে নেশাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও কম। এই গবেষক দলের প্রধান স্যামুলি হেলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম হাফপোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, দাদা বা দাদি, নানা বা নানি শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

গ্রান্ডপ্যারেন্টের সাহচর্য পাওয়া শিশুরা খুব কমই চাইল্ডহুড ট্রমায় পড়ে। আর তাদের মনের ওপর এই ইতিবাচক প্রভাব সরাসরি শরীরেও পড়ে। এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অন্যদের তুলনায় ভালো। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাঁপানি এমনকি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে তাদের।

এর কারণও জানিয়েছেন গবেষক স্যামুলি হেলে। দাদা–দাদি, নানা–নানিরা যত দিনে মা–বাবা থেকে এই পর্যায়ে যান, তত দিনে তাদের বেশির ভাগই নিজেদের শুধরে নেন। বয়স আর অভিজ্ঞতায় তারা পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠেন। মা–বাবা হিসেবে ‘টক্সিক’ হওয়ার ইতিহাস থাকলেও দাদা–দাদি, নানা–নানি হিসেবে তারা বেশ ভালো ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। শিশুদের ওপর দাদা–দাদি, নানা–নানি ভুমিকা:-

  • শিশুর মা–বাবা অনেক ক্ষেত্রেই পেশাগত জীবন ও নানা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এদিকে গ্রান্ডপ্যারেন্টরা বেশির ভাগই অবসরপ্রাপ্ত। ফলে তারা নিজেদের সময়, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সবটুকু নাতি–নাতনিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।
  • বয়সী সঙ্গীরা শিশুকে মা–বাবার টক্সিক প্যারেন্টিং, পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদের নেতিবাচক প্রভাব ও চাইল্ডহুড ট্রমা থেকে রক্ষা করেন। অসুখে, অর্থনৈতিক সংকটে, পারিবারিক বা যেকোনো বিপর্যয়ে ঢাল হয়ে পাশে থাকেন গ্রান্ডপ্যারেন্টরা।
  • শিশুর বেড়ে ওঠায় শৃঙ্খলা আনতে সাহায্য করেন গ্রান্ডপ্যারেন্টরা। যেমন প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, একই সময়ে গোসল করানো, বিকেলে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া, রাতে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুকে শৃঙ্খলিত জীবনে অভ্যস্ত করেন তারা।
  • শিশুকে একটা স্থিতিশীল জীবন দিতে সাহায্য করেন। গ্রান্ডপ্যারেন্ট পাশে থাকলে শিশুরা খুব কমই অনিশ্চয়তায় ভোগে। আর আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে। গ্রান্ডপ্যারেন্টরা গল্প শুনিয়ে শিশুর কল্পনার দুয়ার খুলে দেন। শিশুর শৈশব রাঙিয়ে দেন ছোট ছোট আনন্দের গল্প আর স্মৃতিতে।
  • নানা–নানি, দাদা–দাদিরা তাদের ছোটবেলা, দেশ, রাজনীতি, পরিবার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। কখনো বিপদে বা সমস্যায় পড়লে তারা কীভাবে সমাধান করেছেন, সেসব অভিজ্ঞতার গল্প করেন। ফলে কোনো সমস্যায় পড়লে শিশুরা সহজেই হতাশ হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে না। বরং সমাধান খোঁজে।

সর্বোপরি দেখা যায় একটা মজবুত সম্পর্কের শক্তি অনুধাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন নানা-নানি, দাদা-দাদিরা। একই সঙ্গে মানসিকভাবে ভালো থাকা, একাকিত্ব ঘোচানো, শারীরিকভাবে তৎপর ও ইতিবাচক থাকতেও গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন নানা–নানি, দাদা–দাদিরা।

তারুণ্য ধরে রাখবে এই ১০ খাবার জানুন কি

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব

Spread the love

Check Also

চিনি

চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে শরীরে ঘটবে যে পরিবর্তন

এখন কমবেশি অনেকেই প্রায় প্রত্যেকদিন চিনি খেয়ে থাকেন। বাড়িতে বানানো চা কিংবা প্রায় নাস্তায় কমবেশি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *