Friday , 20 September 2024

আরব তরুণরা যৌন শক্তি বাড়ানোর ঔষধের দিকে ঝুঁকছে

আরব
আরব তরুণরা যৌন শক্তি বাড়ানোর ঔষধের দিকে ঝুঁকছে

আরব এর কায়রোর কেন্দ্রস্থলের ঐতিহাসিক এলাকা বাব আল-শারিয়ায় নিজের কবিরাজি দোকানে কবিরাজ রাবি আল-হাবাশি আমাদের যে জিনিস দেখাচ্ছিলেন, সেটিকে তিনি বলেন তার “যাদুকরী মিশ্রণ।”কামোদ্দীপক ঔষধ এবং প্রাকৃতিক যৌন শক্তি-বর্ধক বিক্রি করে মিস্টার হাবাশি মিশরের রাজধানীতে বেশ নাম করেছেন।

তবে গত কয়েক বছর ধরে তিনি তার ক্রেতাদের চাহিদায় একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন।”এখন বেশিরভাগ পুরুষ নীল বড়ি কিনতে চায়, যেটা তারা পশ্চিমা কোম্পানিগুলো থেকে পায়,” বলছিলেন তিনি।বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তরুণ আরব পুরুষরা এখন আরও বেশি হারে সিলডানাফিল (বাণিজ্যিকভাবে ভায়াগ্রা নামে পরিচিত), ভারডেনাফিল (লেভিট্রা, স্ট্যাক্সিন) এবং টাডালাফিলের (সিয়ালিস) মতো ঔষধ ব্যবহার করছে।

কিন্তু গবেষণায় এরকম প্রমাণ মেলার পরও মিশর এবং বাহরাইনের রাস্তায় বিবিসি যত তরুণের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের বেশিরভাগই যৌন সমস্যার কারণে এরকম ঔষধ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। অনেকে বলেছেন তারা এই ঔষধের নামও শোনেননি।

এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেউ কেউ তো প্রথমে এটা নিয়ে কথাই বলতে চাননি, কারণ, তাদের মতে, এটি ‘সমাজের নীতি-নৈতিকতার বিরুদ্ধে‌।’

কিন্তু ২০১২ সালের এক গবেষণায় যেটা বলা হচ্ছে, আরব বিশ্বে কামোদ্দীপক এবং ধ্বজভঙ্গের ঔষধের মাথাপিছু ব্যবহারের দিক থেকে মিশরের অবস্থান দুনম্বরে। সবার শীর্ষে আছে সৌদি আরব।

এই গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে খবর বেরিয়েছিল সৌদি সংবাদপত্র আল-রিয়াদে। এতে বলা হয়েছিল, সৌদিরা তখন যৌন শক্তি বর্ধক ঔষধের পেছনে বছরে খরচ করতো দেড়শো কোটি ডলার। সৌদি আরবে তখন এরকম ঔষধের ব্যবহার ছিল রাশিয়ার তুলনায় দশগুণ বেশি। অথচ রাশিয়ার জনসংখ্যা সৌদি আরবের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি।

অতি সম্প্রতি ‘আরব জার্নাল অব ইউরোলজি‌’র এক গবেষণার ফলে দেখা যাচ্ছে, ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা তরুণ সৌদি পুরুষ তাদের জীবনে কোন না কোন সময়ে ভায়াগ্রার মতো ঔষধ ব্যবহার করেছে।মিশরের অবস্থান এখনো বেশ উপরের দিকেই। ২০২১ সালের সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেখানে বছরে পুরুষত্বহীনতার ঔষধ বিক্রি হয় ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। এটি মিশরের পুরো ঔষধের বাজারের ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

পুরুষের ওপর চাপ

স্বাভাবিকভাবেই এরকম বড় একটা ব্যবসায় ভাগ বসাতে চেয়েছে অনেকে।মিশরের মুদি দোকানগুলোতে ২০১৪ সালে ‘আল-ফানকুশ‌’ নামের একটি যৌন শক্তি বর্ধক ঔষধ চকোলেট বার হিসেবে বিক্রি হচ্ছিল। আল-ফানকুশের দাম ছিল এক মিশরীয় পাউন্ড (পাঁচ সেন্ট)। তবে বাজারে আসার কিছুদিনের মধ্যেই আল-ফানকুশের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। স্থানীয় গণমাধ্যমে বেরিয়েছিল যে আল-ফানকুশ শিশুদের কাছেও বিক্রি করা হচ্ছিল। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী এই কোম্পানির মালিককে গ্রেফতার করে।

পুরুষত্বহীনতার ঔষধ তরুণদের চেয়ে বয়স্ক পুরুষদের কাছেই বেশি বিক্রি হয়। তবে ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সেখানে এ ধরণের ঔষধ মূলত ব্যবহার করে ২৫ হতে ৪৫ বছর বয়সীরা।

ইয়েমেনে ২০১৫ সালে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তারপর থেকে সেখানে আনন্দ-ফুর্তি করার পার্টিতে তরুণ পুরুষরা ঔষধ হিসেবে ভায়াগ্রা এবং সিয়ালিসের ব্যবহার শুরু করে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর থেকে ধারণা পাওয়া যায়। ইয়েমেনের এই গৃহযুদ্ধ চলছে হুথি বিদ্রোহী এবং সৌদি সমর্থিত সরকারের মধ্যে।

তিউনিসিয়ার মোহাম্মদ সফাক্সি ইউরোলজি এবং রিপ্রোডাক্টিভ সার্জারি প্রফেসর। তিনি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই ঔষধগুলোকে ‘উদ্দীপক’ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেই, কারণ এগুলো মূলত বয়স্কদের মধ্যে যে ধরণের সমস্যা দেখা যায়, তার চিকিৎসার জন্য।

রাবি আল-হাবাশি বলছেন, মিশরের তরুণরা এখন বেশি হারে ভায়াগ্রার মতো ঔষধ ব্যবহার করছে।
ছবির ক্যাপশান,রাবি আল-হাবাশি বলছেন, মিশরের তরুণরা এখন বেশি হারে ভায়াগ্রার মতো ঔষধ ব্যবহার করছে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের যৌন বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞের মতে, তরুণ আরবরা যে এরকম পুরুষত্বহীনতার ঔষধ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে, তার মূলে আছে সেখানকার বিদ্যমান সংস্কৃতি।

“এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে তরুণ আরব পুরুষরা আরও বড় যে সমস্যায় ভুগছে, সেটাই এর মূলে”, বলছেন শিরিন আল ফেকি। তিনি একজন মিশরীয়-ব্রিটিশ সাংবাদিক। আরব বিশ্বের যৌন সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে একটি বই লিখেছেন- “সেক্স এন্ড দ্য সিটাডেল: ইন্টিমেট লাইফ ইন এ চেঞ্জিং আরব ওয়ার্ল্ড।”

২০১৭ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে যে বড় সমীক্ষা হয়েছিল, সেটির উল্লেখ করে তিনি বলছিলেন, সেখানে দেখা গেছে প্রায় সব পুরুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কিভাবে তারা তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাবে সেটা নিয়ে চিন্তিত। এই জরিপে অনেক পুরুষই বলেছিল, একজন পুরুষ হিসেবে তাদের ওপর কী প্রচণ্ড চাপ।

অন্যদিকে নারীদের মন্তব্য ছিল, “পুরুষরা আর আগের মতো পুরুষ নেই‍।”

শিরিন আল ফেকি বলেন, “পুরুষ বলতে কী বোঝায় সেটা যেহেতু এখন চাপের মুখে আছে এবং এখানকার পুরুষত্বের সংস্কৃতিতে যেহেতু যৌন ক্ষমতার বিষয়টি এত দৃঢ়ভাবে প্রোথিত, তাই যৌনতায় কে কত পারদর্শী, সেটার ওপর এখন আরও বেশি জোর দেয়া হচ্ছে।”

মিজ আল ফেকি এজন্যে অবশ্য পর্নোগ্রাফিকেও দায়ী করছেন। তার মতে, এসব দেখে যৌন-ক্রিয়া সম্পর্কে যেসব ভুল ধারণা এবং প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে, সেটার কারণেই এখন পুরুষদের যৌন সক্ষমতার ওপর অনেক বেশি জোর দেয়া হচ্ছে।

“পুরুষত্ব বলতে আসলে কি বোঝায়, কোনটা আসলে স্বাভাবিক- এসব পর্নোগ্রাফি তরুণদের মধ্যে সেই ধারণাটাই পাল্টে দিচ্ছে,” বলছেন তিনি।

ঐতিহাসিক ধারণা

আরব সমাজে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা একেবারেই হয় নাছবির উৎস,AFP
ছবির ক্যাপশান,আরব সমাজে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা একেবারেই হয় না
যৌন চাহিদার জন্য ঔষধের ব্যবহার আরব সমাজে একটি সাম্প্রতিক ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে আরব ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, যৌন বল-বর্ধক ঔষধের ব্যবহার এখানকার জন সংস্কৃতিরই অংশ ছিল।

ইবনে কাইয়িম আল-জাজিয়া ছিলেন চতুর্দশ শতকের এক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক গবেষক এবং লেখক। তিনি তার কয়েক খণ্ডের বই ‘অনন্ত জীবনের পাথেয়‌’ বইতে যৌন কামনা বাড়ানোর ভেষজ ঔষধ কিভাবে তৈরি করতে হবে তার বিস্তারিত প্রস্তুত প্রণালি অন্তর্ভুক্ত করেছেন।


নারীদের অর্গাজম কম হয় কেন?

যৌন সক্ষমতা কমে যাওয়ায় পুরুষেরা বিপদে

 

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

প্রাচীন

প্রাচীন মানুষদের যৌন-পরামর্শ

প্রাচীন মানুষদের যৌন-পরামর্শ। কখনও কখনও প্যাপিরাস বা কাগজে নারীরা তাদের চিন্তাভাবনা লিখে রাখতেন। গ্রীক দার্শনিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *