Friday , 20 September 2024

প্যানিক অ্যাটাক নাকি প্যানিক ডিজঅর্ডার বুঝবেন যেভাবে

প্যানিক অ্যাটাক নাকি প্যানিক ডিজঅর্ডার বিভিন্ন কারণে এখন বেশ অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে আমাদের পৃথিবীতে। আবার আমাদের জীবনযাত্রাও এখন এত বেশি গতিশীল যে একের পরে এক ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সবকিছু ঠিকভাবে করাও বেশ স্ট্রেসফুল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এখন বিভিন্ন ধরনের অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারে ভোগেন। এগুলোর অন্যতম হচ্ছে প্যানিক অ্যাটাক ও প্যানিক ডিজঅর্ডার। এ দু’টো অবস্থা কিন্তু এক নয়, বরং একদমই আলাদা এবং এগুলো মোকাবেলা করার পদ্ধতিও কিছুটা ভিন্ন। আজ জানাচ্ছি প্যানিক অ্যাটাক ও প্যানিক ডিজঅর্ডার হলে তা কীভাবে বুঝবেন এবং কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন সম্পর্কে বিস্তারিত।

প্যানিক অ্যাটাক
প্যানিক অ্যাটাক নাকি প্যানিক ডিজঅর্ডার বুঝবেন যেভাবে

প্যানিক অ্যাটাক বলতে যা বুঝি

ধরুন, আপনি আর পাঁচটা দিনের মতো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছেন। হুট করেই আপনি এমন একটি বিষয় জানতে পারলেন যা আপনার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। খবরটি শোনা মাত্র আপনার মনে হতে লাগলো আপনি ঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। প্যানিক অ্যাটাক হলে এমন হয়ে থাকে। যখন একদম হঠাৎ করে কোনো কিছু নিয়ে ভয় বা প্রচন্ড অস্বস্তি বিশাল ঢেউ এর মতো মূহুর্তের মধ্যেই আপনাকে গ্রাস করে ফেলে, তখন এটাকে প্যানিক অ্যাটাক বলে।

প্যানিক অ্যাটাক হলে যেভাবে বুঝবেন

প্যানিক অ্যাটাকের সময় একজন মানুষ বিভিন্ন ধরনের কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে পারেন। যেমনঃ বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া, হাত পা কাঁপা, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ক্ষেত্র বিশেষে হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, গলায় কিছু আটকে আছে এমন বোধ করা, খুব গরম বা খুব ঠাণ্ডা লাগতে থাকা, বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি বোধ করা, মাথা ঘুরানো, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। কখনো কখনো প্যানিক অ্যাটাকের মাত্রা বেড়ে গেলে চারপাশের পরিচিত পরিবেশও অচেনা মনে হয়, এমনকি চেনাজানা মানুষকেও অনেকে ঠিকভাবে চিনতে পারেন না। যদি আপনার কোনো খারাপ বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। অনেকেই এই উপসর্গগুলোকে হার্ট অ্যাটাক বলে মনে করেন। পরে দেখা যায় আসলে সেরকম কিছু নয়। প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে জানা থাকলে এই সমস্যাকে ভালোভাবে মোকাবেলা করা যায়।

প্যানিক ডিজঅর্ডার কী?

ধরে নেই, আপনি কাছের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দের কোনো রেস্টুরেস্টে গেছেন। সবাই মিলে খুব সুন্দর একটা সময় কাটাতে কাটাতে হুট করেই আপনার ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে শুরু করলো, অথচ যেখানে সে সময় ভয় পাওয়ার কোনো কারণই নেই! এই অবস্থাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার বলে। সহজ ভাষায় এটা হচ্ছে এক ধরণের অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার যেখানে কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই একজন মানুষ হঠাৎ করে আতংক বা ভয় অনুভব করতে থাকেন। সাধারণত স্ট্রেসফুল অবস্থায় কমবেশি সবারই প্যানিক অ্যাটাক হয়ে থাকে। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে যখন এটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখনই সেটাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার বলা হয়ে থাকে।

এখানে একটি বিষয় সবার মনে রাখা প্রয়োজন যে, প্যানিক অ্যাটাক হওয়া মানে সেটা প্যানিক ডিজঅর্ডার নয়। যেকোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু যখন তা নিয়মিত আকার ধারণ করবে এবং ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও আচরণে প্রভাব ফেলবে, তখন সেটাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার বলে ধরে নিতে হবে।

প্যানিক অ্যাটাক ও প্যানিক ডিজঅর্ডার কেন হয়

প্যানিক ডিজঅর্ডার কেন হয়?
আমাদের ব্রেইনের যে ফিয়ার সার্কিট, স্পেসিফিক্যালি অ্যামিগডালা নামক অংশ ভয় এবং আতংকের মত অনুভূতিগুলোকে প্রসেস করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্রেইনের এই অংশগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি অ্যাকটিভ থাকে। যে কারণে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াও যেকোনো সময়ে তাদের প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে। কারো যদি এই সমস্যা থাকে, তাহলে তার ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবন দু’টোতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

যেভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে? 

প্যানিক অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানে থেরাপি এক্সারসাইজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে সকল পেশেন্ট অতিরিক্ত ভয় বা আতংকে ভুগে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে কোগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি ও সাইকোডাইনামিক থেরাপি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রিলাক্স্যাশন টেকনিক, মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস, মেডিটেশন প্যানিক অ্যাটাক মোকাবেলায় কাজে দেয়।

তবে অনেক ক্ষেত্রে প্যানিক অ্যাটাকের মাত্রা এত বেশি হয়ে থাকে যে মানুষ এ ধরনের কোনো টেকনিক বা উপায় ফলো করার মতো শারীরিক বা মানসিক অবস্থায় থাকেন না। সেসব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের এর সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। এ সকল ওষুধের মাধ্যমে এ ধরনের কষ্টকর অনুভুতি থেকে রিলিফ পাওয়া যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

ভালো থাকতে নিজের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনুন 

জীবনযাত্রায় যথাযথ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং কিছু বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে প্যানিক অ্যাটাককে অনেকংশে নিয়ন্ত্রণ বা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। এ বিষয়গুলো হলো-

  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস করা
  • প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো
  • চা কফির পরিমাণ কমানো, বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার সাত থেকে আট ঘণ্টা আগে থেকে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহণ না করা
  • দিন ও রাতের কাজের সুনির্দিষ্ট রুটিন থাকা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিনের আলোতে থাকা
  • দিনের কিছুটা অংশ প্রকৃতির সাথে থাকা।
  • পরিবার এবং কাছের বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো
  • প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও জোরে হাঁটা

আরেকটি পরামর্শ, যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাদের একটু ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে কী কী ঘটনা বা পরিবেশে তাদের প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যা বেশি হয়। সেসব ঘটনা ও পরিবেশ পারতপক্ষে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। দেখবেন ভালো থাকতে পারবেন।

যৌন রোগ থেকে বন্ধ্যাত্ব এবং হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

অরুচি

পছন্দের খাবারেও অরুচি, রাগ হচ্ছে যখন-তখন? আর কোন কোন লক্ষণে বুঝবেন, শরীর বিশ্রাম চাইছে?

দিনভর অনিয়মের বোঝা, উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার পাহাড় ঠেলতে ঠেলতে শরীর এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে,অরুচি র মত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *