ব্যস্ততম পৃথিবীতে নিজেকে দেওয়ার মতো সময়ও আমরা অনেক সময় পাই না। সারাদিন ব্যস্ত থাকতে থাকতে নিজের দিকে খেয়াল রাখার আর সুযোগ পাওয়া যায় না। এই সুযোগটি নেয় রোগব্যাধি রক্তে । সময়মতো খাওয়া-দাওয়া ও শারীরিক ব্যায়াম না করায় শরীরে বাসা বাধে নানা রোগব্যাধি।
রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পেয়েছে যে লক্ষণে বুঝবেন
এই সুযোগে অনেকেরই রক্তে বাড়ে উচ্চ শর্করা। রক্তের উচ্চ শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন প্রয়োজন। তাই আমাদের বুঝা উচিত কখন রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ কারণেই বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়। কিছু লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে যে রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে জানাব সেই সব লক্ষণ। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন
আমড়া দিয়ে ডালের মুখরোচক রেসিপি
সঙ্গীর সঙ্গে মতের মিল হয়না, সামলাবেন যেভাবে
১. ক্লান্তি বা অবসাদ
চরম ক্লান্তি বোধ করা রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করার লক্ষণ হতে পারে। যখন আপনার রক্তে খুব বেশি গ্লুকোজ (চিনি) থাকে, তখন আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। যে রক্তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে তা স্বাভাবিক শর্করার মাত্রাযুক্ত রক্তের চেয়ে ধীরে ধীরে চলে। শর্করার উচ্চমাত্রা রক্তনালীগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন রক্তনালিগুলো ফুলে যায় তখন মস্তিষ্কে মনোসাইট ক্ষরণ হয়।
মনোসাইট হলো ইমিউন কোষ। এগুলো ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২. ঝাপসা দৃষ্টি
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে চোখে ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যা অনুভব করতে পারেন। রক্তে শর্করার মাত্রা যদি হ্রাস না পায় তাহলে চোখের লেন্স ফুলে যায়। লেন্সের এই পরিবর্তনটি আপনার দেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে লেন্সের এই স্থায়ী ফোলাভাব স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
৩. মাথা ব্যথা
উচ্চ শর্করা থাকলে মাথা ব্যথা একটি সাধারণ ঘটনা। যদিও এই সমস্যাকে মাইগ্রেন বা গুরুতর প্রকৃতির সমস্যা হিসেবে ধরা হয় না। কিন্তু এটি রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি। যদি চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হন, মাথা ব্যথা আরো খারাপ অবস্থায় যাবে।
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রশ্রাব করা রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রার একটি সাধারণ লক্ষণ। যেহেতু রক্ত শর্করা প্রক্রিয়া করে না, এটি আরো বেড়ে গিয়ে কিডনিতে পৌঁছায়। সেখানে কিডনি সঠিকভাবে ফিলটার করতে না পারায় প্রশ্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৫. অতৃপ্ত তৃষ্ণা
অত্যধিক তৃষ্ণা রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রার একটি লক্ষণ। এর ফলে অধিক প্রশ্রাবের চাপও অনুভব হয়। কেননা যে পরিমাণ পানি পান করা হয় তা অবশ্যই শরীর থেকে বের করতে হবে। আবার প্রশ্রাব শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে নিজেকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করতে হবে। সুতরাং আপনি পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেনই। আপনি যত বেশি বাথরুমে যাবেন, তত বেশি পানি পান করতে চাইবেন।
৬. ক্ষুধা বৃদ্ধি
এটি রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রার একটি স্বীকৃত সাধারণ লক্ষণ। আপনি যতই খান বা যত ঘন ঘন খান, আপনার মনে হবে পেট খালি! এছাড়াও এটি অনিয়মিত খাবার গ্রহণ, চাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, বা হাইপারথাইরয়েডিজমসহ অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে।
৭. মুখ সব সময় শুষ্ক বোধ করা
এটি রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা ও ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ। আপনার যদি শুকনো মুখ থাকে এবং সন্দেহ হয় যে আপনার ডায়াবেটিস হতে পারে তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ রইল। মুখের মধ্যে লালার অভাবের কারণে মুখ শুকিয়ে যায়। শুকনো মুখ কথা বলা, খাবার চিবানো ও গিলে ফেলাকে কঠিন করে তোলে। কারণ এই কাজগুলোর জন্য লালা প্রয়োজন।
৮. স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক ত্বক ও চুলকানি
চুলকানি ডায়াবেটিস ও রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করার একটি সাধারণ লক্ষণ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ত্বকে চুলকানি অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনার যদি রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে বা সন্দেহ হয় যে হতে পারে তবে আপনার ত্বকে চুলকানি ব্যাপারটা উপেক্ষা করবেন না। চুলকানি থেকে আপনার ত্বকে যে ক্ষতি হবে তা গুরুতর হতে পারে।
৯. উচ্চ রক্তচাপ
রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালির অনিয়মিত সংকোচনের কারণে ঘটে। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালীরও ক্ষতি করে। যখন আপনার র-ক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি থাকে, তখন এটি আপনার রক্তনালির স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তন করে। রক্তনালীগুলোর এই সংকীর্ণতা রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলে। রক্তনালীগুলোর দেয়ালে উচ্চচাপ স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুন
ভরা পেট খেয়েও খিদে পেয়ে যায় একটু বাদেই কেন এমন হয় বলুন তো
১০. ফলের গন্ধযুক্ত শ্বাস
আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার শ্বাসে ফলের গন্ধ রয়েছে, তবে এটি ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য লক্ষণ। এছাড়া এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেশি, তা নির্দেশ করে। এটি একটি জীবন-হুমকির অবস্থা এবং এর জন্য জরুরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। তাই উপর্যুক্ত লক্ষণগুলো দেখা মাত্র বুঝতে হবে আপনার র.ক্তে উচ্চ শর্করা। তাই অবহেলা নয়, বরং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সূত্র : স্বাস্থ্যবিধি
এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।