স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফা পায়েল । চলতে-ফিরতে তাঁর সঙ্গে স্মার্টফোন থাকবেই । মাথা নিচু করে স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে রাখা কিংবা কানে এয়ারফোন দিয়ে কোনো গান শোনাই যেন জারিফার নিত্যদিনের অভ্যাস । এর সঙ্গে একটু পরপর ফেসবুকের ‘টিং’ নোটিফিকেশনের শব্দ তো আছে, বন্ধুরা কে কোন ছবিতে লাইক দিয়েছেন তা জানার জন্যই স্মার্টফোন থেকে এক মিটার দূরে যেতেও চান না জারিফা ।
তরুণ ব্যাংকার মাজহারুল ইসলামের । সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাজহারুল কাজ সামলাবেন না মুঠোফোন সামলাবেন তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বিব্রত হন । হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানসহ হাজারও নেশায় আসক্ত মাজহারুল আর জারিফা । এই তরুণদের মতো আমরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্রে আমাদের মুঠোফোনে আসক্তির কারণে হাজারো বিপত্তিতে পড়ি ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস রিভিউ সাময়িকী বলছে, ২০১০ সালের কর্মক্ষেত্রে ৩৯ শতাংশ তরুণ ম্যানেজারের মুঠোফোনে আসক্তি ২০১৪ সালে এসে ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সপ্তাহে স্মার্টফোনে তরুণ পেশাজীবীরা এখন ৩৫ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করেন, যা কি না তাঁদের কাজের গুণগত মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪৫ ঘণ্টার ওপরে মুঠোফোনে ডুবে থাকেন ।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে জানা যায়, ৪৬ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারী ‘ফোন ছাড়া বাঁচবই না’ বলে মনে করেন । ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, তরুণেরা এখন মুঠোফোনকে তাঁদের শরীরের অঙ্গই মনে করেন । ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দেখেছেন, মুঠোফোনে আসক্ত ব্যক্তিদের উচ্চরক্তচাপ, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি । শতকরা ৬৩ শতাংশ মানুষ ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোনে আগে চোখ রাখেন । মুঠোফোনে আসক্তিকে তো পিসিম্যাগ প্লেগ রোগের সঙ্গে তুলনা করে। টাইম ম্যাগাজিন, ফেমিনা, দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা মুঠোফোনে আসক্তি কমাতে অনেক বুদ্ধি বের করেছে ।
স্মার্টফোনে আসক্তির নেশা কমাবেন যেভাবে –
* ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে মুঠোফোন নিয়ে ঘুমাবেন না । এতে ফোনের তেজস্ক্রিয়াজনিত ঝুঁকি থেকে মুক্ত হওয়া যায়, তেমনি ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোনে চোঁখ রাখার অভ্যাস কমানো যায় ।
* কোনো মিটিং কিংবা ক্লাসে মুঠোফোন বন্ধ করে ব্যাগে কিংবা টেবিলের ড্রয়ারে রেখে আসুন । মিসড কল অ্যালার্ট সার্ভিসের মাধ্যমে ফোন বন্ধ রাখার সময় কে কে ফোন করেছিলেন তা জানতে পারেন ।
* খাওয়ার সময় কখনোই ফোনের পর্দায় চোখ রাখবেন না । খাওয়া উপভোগ করার জন্য ফোন থেকে দূরে থাকুন ।
* মুঠোফোনে ই-মেইলের উত্তর দেওয়ার বদলে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে অভ্যাস করুন ।
* ফ্রিডম, অ্যাপডেটক্স, স্টে অন টাস্ক, ব্রেকফিসহ বিভিন্ন অ্যাপ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি কমাতে পারেন । এই অ্যাপগুলো আপনার
মুঠোফোনে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন
অ্যাপ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রেখে আপনার আসক্তি কমাতে পারে ।
* প্রতিদিন সকালে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ও রাতে বই পড়ার অভ্যাস স্মার্টফোনে আসক্তি অনেকটা কমিয়ে আনে ।
* ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সেটিংস অপশন থেকে নোটিফিকেশন বার্তা কমিয়ে নিতে পারেন ।
* স্মার্টফোনে আসক্তি কমাতে সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করতে পারেন, যা শুধু কাজের জন্য কল দেওয়া আর খুদেবার্তা পাঠানোর জন্য ব্যবহার করবেন ।
* বিভিন্ন আড্ডা কিংবা খেলার মাঠে নিজের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। বন্ধুদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার, বন্ধুদের চোঁখে চোঁখ রেখে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠুন, এতেও মুঠোফোন আসক্তি অনেক কমে আসে ।
* সন্তানকে ফোনে ই-বুক পড়ার অভ্যাসের বদলে রঙিন বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন ।
* সন্তানের হাতে উচ্চপ্রযুক্তির স্মার্টফোন তুলে না দেওয়াই ভালো । খুব প্রয়োজন হলে সাধারণ ফোন ব্যবহার করার অনুমতি দিতে পারেন ।
* দৈনন্দিন কাজের হিসাব, মিটিং কখন, কোথায় তা লেখার জন্য মুঠোফোনের অ্যাপ ব্যবহারের চেয়ে কিছুদিন ডায়েরিতে হাতে-কলমে লেখার অভ্যাস করুন ।
* যানজটে বসে মুঠোফোনে মুখ না গুঁজে ব্যাগে বই রাখতে পারেন । যানজটে মুঠোফোনে গান না শুনে বা ফেসবুক ব্যবহার না করে বই পড়ার অভ্যাস করুন ।
* কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে সেলফি কিংবা ফোনে ছবি তোলার বদলে অনুষ্ঠানের অতিথিদের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ান আর গল্প করার অভ্যাস করুন ।
সুন্দরভাবেই জীবন কাটায় মাহিয়া মাহি
আশাকরি আমাদের টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।
যদি সমান্যতম কাজে লাগে তবে একটা ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না।
আর নিয়মিত টিপস পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
ফেসবুক পেজ
আমাদের সাইটে কোন প্রকার অশ্লীল আর্টিকেল দেওয়া হয় না।
মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।
এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব