শায়লা আর মারজুক একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে পড়েন । তাঁদের দুজনের বাসাও কাছাকাছি । প্রায়ই তাঁরা একসঙ্গে যাওয়া-আসা করেন । একসঙ্গে অবসরে বসে থাকেন । একে অপরের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন । দুজনের খুব বন্ধুত্ব । অন্যরা তাঁদের নিয়ে নানা ফিসফাস করেন, হাসাহাসি করেন । ওদের দুজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন, ‘আমরা কেবলই বন্ধু’। সহপাঠীরা ঠোঁট উল্টান, চোঁখ ছোট করে একে অপরকে বলেন, ‘ছেলেতে-মেয়েতে আবার বন্ধুত্ব হয় নাকি?’
ছেলে আর মেয়েরা বন্ধু হতে পারেন কি না, আর বন্ধু হলেও তাঁদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না, এ নিয়ে রয়েছে নানা মত, নানা বিশ্বাস । এই মত আর বিশ্বাসের মূলে রয়েছে আমাদের ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠা সামাজিক শিক্ষা আর আশপাশের আচরণ । শিশু যখন কেবল কথা বলতে শেখে, যখন স্কুলে যেতে শুরু করে, তখন থেকেই পরিবারের সদস্যরা তার মধ্যে এই বোধটি নিজেদের অজান্তেই তৈরি করে দেন। শিশুদের বন্ধু কজন জিজ্ঞেস না করে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তোমার মেয়েবন্ধু কতজন’ আর মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করা হয় ‘তোমার ছেলেবন্ধু নেই?’ বন্ধুত্বের ধারণা ছাপিয়ে শিশুর মনে ‘মেয়েবন্ধু’ আর ‘ছেলেবন্ধু’র ধারণা জোরালো হয়ে ওঠে। আবার অনেক সময় বাবা-মায়েরা সচেতনভাবেই মেয়েশিশুকে মেয়েদের সঙ্গে আর ছেলেশিশুকে ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নির্দেশ দিয়ে দেন ।
বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কিছু কড়া নিয়ম থাকে যে কোনোভাবেই ছেলে-মেয়ে বন্ধুত্ব তো দূরের কথা কথাবার্তাও বলতে পারবে না! এ ধরনের সামাজিক ধারণার কবলে পড়ে বিকাশমান শিশু-কিশোরেরা বিশ্বাস করতে শুরু করে ছেলেতে-মেয়েতে বন্ধুত্ব নয়, কেবলই অন্য সম্পর্ক ।
কখনো খ্যাতিমান লেখকের বই পড়ে সেখান থেকে উদ্ধৃত করে অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘ছেলে মেয়ের শুধু বন্ধুত্ব,ছেলেতে-মেয়েতে কখনো বন্ধুত্ব হয় না, জীবনে কখনো না কখনো তারা একে অপরের প্রেমে পড়বেই।’ কিন্তু লেখক কোন প্রেক্ষাপটে এই লেখাগুলো লিখেছিলেন এবং তাঁর লেখার শেষাংশে কী প্রমাণিত হয়েছিল তার ব্যাখ্যাটুকু কিন্তু কেউই দেন না । দুজন ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে চললে-ফিরলেই আশপাশের মানুষেরা ধারণা করেন যে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়ে গেছে । প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও কিন্তু প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হতে পারে, হতে পারে কর্মক্ষেত্রের সফল জুটি ।
বিজ্ঞান বলে নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব তাঁদের মানসিক অভিযোজনের কারণে কখনো কখনো রোমান্টিকতায় পর্যবসিত হতে পারে । তবে তার জন্যও দায়ী কিন্তু সামাজিক ধারণার জগৎ (সোশ্যাল লার্নিং)। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকোনসিন ইসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লেস্কি-রিচেক ও অন্যান্য ২০১২ সালে ৮৮ জোড়া বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুর ওপর গবেষণা করে জানান যে বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্বের মধ্যে এটা বড় অংশ একপর্যায়ে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তা ছেলেবন্ধুদের থেকেই শুরু হয় । নারীরা বেশির ভাগÿক্ষেত্রে তাঁর ছেলেবন্ধুটির প্রতি প্লেটনিক ভালোবাসা পোষণ করেন ।
তবে সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, নারী-পুরুষের বন্ধুত্বের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে রোমান্টিকতা জন্ম নিলেও তাঁদের মধ্যে নিখাদ বন্ধুত্বও সম্ভব । এর জন্য যেটা জরুরি সেটা হচ্ছে ‘ফ্রেন্ডশিপ জোন’ নির্ধারণ করা । এই জোন নির্ধারণ করবে কারা বন্ধু হবেন, কেন বন্ধু হবেন । বন্ধু, নারী বা পুরুষ নয়, সে কেবলই বন্ধু; এই ধারণা নিজের মধ্যে পোষণ করার পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে—বন্ধুত্বের চাহিদা ভিন্ন রকম । একেক বন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্তি একেক রকম । বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে ।
বন্ধুর সঙ্গে যেন যোগাযোগের কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে যখন বন্ধুত্ব করছেন তখন তিনি যেন কখনোই আপনাকে ভুল না বোঝেন ।
কপটতা নয়—বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো কপটতা রাখবেন না ।
কেবল একজনের সঙ্গেই নয়—বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে কেবল তাঁকেই সময় দেবেন তা নয় । আপনার অন্য বন্ধুদেরও
সময় দিন ।
মনের কথা খুলে বলুন—আপনার বন্ধুটিকে আপনার মনের কথা খুলে বলুন । তাঁকে যদি আপনি রোমান্টিকভাবে পেতে চান তবে মিথ্যে অভিনয় করবেন না ।
তাঁকে আপনার ভালো লাগার কথাটিও বলুন ।
বন্ধুত্ব বা প্রেম যা-ই হোক না কেন, আপনাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন যেন অটুট থাকে সারা জীবন ।
স্মার্টফোনে আসক্তির নেশা কমাবেন যেভাবে
আশাকরি আমাদের টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।
যদি সমান্যতম কাজে লাগে তবে একটা ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না।
আর নিয়মিত টিপস পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
ফেসবুক পেজ
আমাদের সাইটে কোন প্রকার অশ্লীল আর্টিকেল দেওয়া হয় না।
মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।
এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব