বৈশাখ মানেই বাঙালী নারীর পরনে লাল-সাদা শাড়ি, কপালে লাল টিপ, হাতে কাচের চুড়ি। দেশীয় ঐতিহ্যের পোশাকে নিজেকে সজ্জিত করায় একমাত্র উদ্দেশ্য। বাঙালী নারীর সাজের প্রসঙ্গ এলে মেহেদি রাঙা হাত আর আলতা রাঙা পা বাদ যায় না কখনো।এখনও গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে নানা উৎসবে বিশেষ করে আলতা-ফিতা আর মেহেদিতে বাঙালী নারী খুঁজে পায় তার আপন রূপ। পহেলা বৈশাখে বাঙালী সারা বছরের জড়তা আর জঞ্জাল কাটিয়ে নতুন উদ্দামে নবপ্রাণ উদ্দীপ্ত হয়। উৎসবের প্রতিটি পরতে মিশে থাকে বাঙালীয়ানার ছাপ। মনের মতো করে ডিজাইন করে মেহেদির রঙে হাত রাঙিয়ে নতুন বছরে পদার্পণ হয় তাদের।
যুগ পাল্টেছে। মেহেদি বলতে এখন আমরা টিউব মেহেদিই বুঝি। তবে কেউ যদি বাটা মেহেদি লাগাতে চান কোণ মেহেদির আদলে, তার জন্যও আছে ব্যবস্থা। ঘরে খুব ভালো করে মেহেদি বেটে কোণে ভরে নিতে পারেন। গাঢ় রঙের জন্য তাতে খয়ের
মেশাতে পারেন। মেহেদি ব্লেন্ডারেও বেটে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন বেশি পাতলা না হয়ে যায়। পানির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে ডিজাইনের আকারে লেপটে যাবে। হাতের মেহেদি শুকিয়ে এলে তাতে চিনির সিরা আর লেবুর রস লাগালে রঙ গাঢ় হয়।
অনেকে অ্যারাবিয়ান স্টাইলেই মেহেদি লাগাতে পছন্দ করেন। এতে একটু ফাঁকা জায়গা রেখে ফুলেল মোটিফ দেখা যায়। তবে ভারতীয় নকশার কদরও আছে কারো কারো কাছে। এটি অনেক বেশি সুন্দর নকশার হয়। একটু কম বয়সী যারা আছে, তারা ভারতীয় নকশায় হাত রাঙাতে বেশি পছন্দ করে। বয়স ভেদে নকশার খুব একটা পার্থক্য আসে না। তবে যারা বয়সে একটু ছোট, তারা অপেক্ষাকৃত ঘনভাবেই ডিজাইন দিতে পছন্দ করে। পুরো হাতে লাগাতে না চাইলে এক লাইনের নকশায় সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার হাত।
কালো আর লাল মেহেদির সমন্বয়ে মেহেদি লাগানোটাই এখন বেশি চলে। সে ক্ষেত্রে বাইরে কালো আউটলাইন দিয়ে ভেতরে লাল মেহেদির নকশা করতে পারেন। দেখতে ভালো লাগবে।
বাজারে যেসব টিউব মেহেদি পাওয়া যায়, এতে কিছুটা হলেও রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। এজন্য সবার হাতের জন্য তা মানানসই না। লাগানোর পর কারো কারো হাতে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে কালো মেহেদি ব্যবহার না করায় ভালো। লাল মেহেদির ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। র্যাশ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্জির ওষুধ খেতে হবে। এছাড়া ভালো ব্র্যান্ডের মেহেদি দেখে নিলে অনেকটায় ঝামেলা মুক্ত থাকা সম্ভব।
পরিপূর্ণ বাঙালী নারীর সজ্জিত রূপ পেতে আলতা, ফিতা আর মেহেদির খোঁজে যেতে পারেন নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, মৌচাক, ফার্মগেট বা হাতের কাছে যেকোনো মার্কেটে। এছাড়া পেতে পারেন পুরান ঢাকার চকবাজার ও রাজধানীর বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানে।