Friday , 18 October 2024

ত্বকের যত্নে আয়ুর্বেদিক

ত্বকের যত্নে আয়ুর্বেদিক! সৌন্দর্যের পিপাসা কখন মেটেনি যুগ যুগ ধরে। রূপচর্চায় প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক পদ্ধতি সমাদৃত। রূপচর্চার ইতিহাসে দেখা যায় খাঁটি দুধ, শিশির ঝরা ফুলের রেণু, কাঁচা হলুদের নির্যাস, নিমপাতার রস, মেহেদি পাতার রঙ, গোলাপের নির্যাস, চন্দন কাঠের গুঁড়া, মধু, ঘৃতকুমারী, কচি ডাবের শাঁস, শসা, বিভিন্ন ফুল-ফলের নির্যাস, গাছের ছাল-বাকলের নির্যাস প্রাধান্য পেয়েছে। লিখেছেন হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের অল্টারনেটিভ মেডিসিন গবেষক ডা. হাকিম নার্গিস মার্জান।

ত্বকের
ত্বকের যত্নে আয়ুর্বেদিক

মানবদেহের সংবেদনশীল অংশ হচ্ছে ত্বক। যা শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র, স্বাভাবিক এবং সেনসিটিভ ইত্যাদি ধরনের হয়। ত্বক দেহকে আবৃত করার মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দেয়, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ-জীবাণু থেকে দেহকে সুরক্ষিত রাখে। স্পর্শের অনুভূতি, সুখানুভূতি, উষ্ণতা ও ব্যথার অনুভূতি দেয়। পারিপাশ্বিক পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি অপসারণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ত্বক ভিটামিন ডি উৎপাদনে সহায়তা করে।

ত্বকের অতি পরিচিত রোগ ঘামাচি, ব্রণ, ফোঁড়া, দাদ, ত্বকের বিবর্ণতা, খোসপাঁচড়া, চুলকানি, একজিমা, র‌্যাশ, ফুসকুড়ি, ডারমাটাইটিস, সোরিয়াসিস, শ্বেতী, আর্টিকেরিয়া ও ক্যান্ডিডিয়াসিস রক্ষা করে।

ট্র্যাডিশনাল অল্টারনেটিভ চিকিৎসাব্যবস্থা মতে, রক্ত দূষণ এবং দেহে থাকা মৌলিক উপাদানগুলোর ভারসাম্যহীনতার কারণেই মূলত ত্বক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ত্বকের এমন কোনো রোগ নেই, যা রক্তের সুসঙ্গত পরিবর্তন ছাড়া হয়। রক্ত দূষণের প্রভাবে কিংবা রক্তের যেকোনো গুণগত পরিবর্তনের লক্ষণ হিসেবে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের রোগ আত্মপ্রকাশ করে। ড. আর.বি অরোরা এবং ড. এন.আই আনসারীর মতে ত্বকে ৫৫ ধরনের মৌলিক উপাদান রয়েছে।

আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে ত্বকচর্চা করা হয় বলে পাশর্^প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। এ জন্য সৌন্দর্যপিপাসু মানুষেরা শত-সহস্র বছর ধরে ত্বকচর্চায় নিশ্চিন্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে আসছে। ত্বকচর্চার প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ব্যবহার যেভাবে হয় তাহলো

ত্বকে ব্রণের সমস্যায়

ব্রণের সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরা, নিম ও জাফরানের কার্যকারিতা অপরিসীম। অ্যালোভেরা জেল কিংবা নিমপাতা বেটে প্রতিদিন ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহ ব্যবহারেই ব্রণ দূর হয়ে যাবে। প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে জাফরান ব্যবহারেও ব্রণ চলে যায়। সামান্য পরিমাণ দারুচিনি ও কয়েকটি লবঙ্গ পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে পেস্ট তৈরি করে মিশ্রণটি মুখের ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন এই পেস্ট ব্যবহার করলে চিরতরে ব্রণ নির্মূল হয়ে যাবে।

ত্বক পরিষ্কার করতে

মুখের ত্বকের উপরিভাগ ও রোমকূপের গোড়া পরিষ্কার করার প্রাচীন পদ্ধতি হলো কাঁচা দুধের ব্যবহার। দুধ প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ ও উজ্জ্বল করে তোলে। প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে ভালো করে মুখ ধুয়ে একটি তুলার বল দুধে ভিজিয়ে মুখে লাগান। এক সপ্তাহেই পার্থক্য চোখে পড়বে। এছাড়াও ত্বক পরিষ্কারে কচি ডাবের শাঁস, শসা ও আলু খুবই উপকারী। মুখের ত্বকের ময়লা দূর করার জন্য সামান্য পরিমাণে কচি ডাবের শাঁস কিংবা এক টুকরো শসা কিংবা এক টুকরো আলু নিয়মিত কয়েক দিন মুখে ঘষলেই ফল পাওয়া যায়।

ত্বকের উজ্জ্বলতায় ও বয়সের ছাপ রোধে

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও বয়সের ছাপ রোধ করার জন্য হলুদ বেশ কার্যকর। কাঁচা হলুদ বেটে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে, অন্যদিকে দূর হবে ত্বকের বয়সের ছাপ। হলুদ ত্বকের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে এবং ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও প্রতিদিন দুপুরে খাবারের পর এক গ্লাস লেবুর রস পান করলেও ত্বকের বয়সের ছাপ দূর হবে। প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে জাফরান ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ছাপও দূর হয়।

ত্বকের কোমলতায় ও মসৃণতায়

মধু ত্বকের রুক্ষতা দূরে করে ত্বককে কোমল করে তোলে। এছাড়াও মধু ব্রণের কারণে তৈরি ক্ষুদ্র গর্তগুলো দূর করে ত্বককে করে তোলে মসৃণ। মুখ ভালো করে ধুয়ে এক চা চামচ মধু নিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট মুখে ম্যাসাজ করুন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকের কোমলতা ও মসৃণতা বৃদ্ধি পাবে।

ত্বকের সুস্বাস্থ্যে

ত্বকের সুস্বাস্থ্যে চন্দন, গোলাপ ও হলুদ অতুলনীয়। ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করতে এবং রোদে পোড়া ত্বক সারাতে চন্দন দারুণ কার্যকরী। ত্বকের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে হলুদ। ত্বক সতেজ, উজ্জ্বল ও শীতল রাখে গোলাপ। চন্দন, গোলাপের পাপড়ি ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে লাগান, ত্বকের সুস্বাস্থ্যে ঠিক থাকবে।

ত্বকের টোন ঠিক রাখতে

ত্বকের টোন ঠিক রাখতে টকদই ও শসার ফেসপ্যাক ভীষণ উপকারী। নিয়মিত এই প্যাকের ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দয্য ঠিক থাকবে। এছাড়াও নিমপাতা সেদ্ধ পানি ত্বকের প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে দারুণ কার্যকর। রাতে ঘুমানোর আগে মুখের ত্বকে ছোপ ছোপ করে এই পানি লাগিয়ে ভালোভাবে মুখ মুছে নিতে হবে। রাতভর এটা ত্বকে থাকা ব্রণ, মেছতা এবং ব্ল্যাকহেডসের বিরুদ্ধে কাজ করবে।

ত্বকের জীবাণু নাশ ও সংক্রমণ প্রতিরোধ

ব্রণ, ফুসকুড়ি ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যার চিকিৎসায় নিমপাতা খুবই কার্যকরী। বর্তমানে ত্বকচর্চার পণ্য তৈরিতে নিমপাতার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। নিমপাতা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। তুলসী পাতাও ত্বককে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাঁচড়া দূর হয়। এর পাতা বা ফুল বেটে চুলকানিতে লাগালে জাদুর মতো কাজ করে।

ত্বক ময়েশ্চারাইজ রাখতে

অ্যালোভেরা এবং নিমপাতার রস ত্বক ময়েশ্চারাইজ ও সতেজ করে। ভিটামিন এ, বি১২, সি, ই দ্বারা পরিপূর্ণ অ্যালোভেরা ত্বকের কোষ মেরামতে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায় এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। অ্যালোভেরা জেল মুখে মাখুন, শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, অতঃপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

আরও যা করবেন

এ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন, নিয়মিত হাঁটুন, রৌদ্র এড়িয়ে চলুন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, টাটকা খাবার খান, মাঝে মধ্যে শরীর ডিটক্স করুন, সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন শরীর ম্যাসাজ করান, দৈনিক অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমান, নিয়মিত বাদাম খান, আদা ও মধু মিশিয়ে নিয়মিত এক কাপ চা পান করুন, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফলমূল ও সবজি রাখুন এবং দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।

হার্নিয়ার লক্ষণ এবং রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি থাকে

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

 

Spread the love

Check Also

দুর্গাপূজার

দুর্গাপূজার ৫ দিনে সাজপোশাক যেমন হবে

বাঙালির উৎসব মানেই প্রচুর খাওয়াদাওয়া আর ঘোরাঘুরি। শরতের শুরু থেকেই চারদিকে দুর্গাপূজার আমেজ পাওয়া যায়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *