বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করা আইবিএস প্রতিষ্ঠানের কাজ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পূর্ব দিকের সরু রাস্তাটি ধরে হাঁটলেই খয়েরি রঙের ভবনটি চোখে পড়বে। সামনে ফুলের বাগান। দুই দিকে দুটি বড় গাছ। তিনতলা ভবনের ওপর ইংরেজিতে লেখা ‘আইবিএস’, যার পূর্ণরূপ ‘ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’। বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, ভূগোল, পরিবেশ ও মানুষের জীবনধারা–সম্পর্কিত বিষয়ে উচ্চতর মৌলিক গবেষণা করে এই প্রতিষ্ঠান। নতুন গবেষক সৃষ্টি, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়নে গবেষণালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগানোই ছিল আইবিএস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য।
যেভাবে শুরু
১৯৭৪ সালের ২৪ জানুয়ারি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) গড়ে ওঠে। শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়ার একটি বাসা থেকে চলত এর কার্যক্রম। পরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের তিনতলায় সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের কাছে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব জায়গায় হোস্টেল ভবন নির্মিত হলে সেখানে চলে যায় অফিস। ১৯৯০ সালে হোস্টেলের পাশেই আইবিএস ভবন নির্মিত হয়। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের যাবতীয় কার্যক্রম এখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে।
চারজন বিদেশি শিক্ষক ও তিনজন দেশি শিক্ষকের হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল। চার বিদেশি শিক্ষক হলেন ডেভিড কফ, ক্লারেন্স টি মেলোনি, জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক ও নিকোলাস বারকুইচি। দেশের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আলী আনোয়ার, সনৎকুমার সাহা ও শফিউদ্দিন জোয়ার্দার। আইবিএস থেকে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি নেন গোলাম মুরশিদ। তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ডেভিড কফ। এ ছাড়া অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরী, শিবনারায়ণ রায়, টি এস ম্যাক্সওয়েল, উইলিয়াম রাদিচে, টি সি বোসের মতো বিদেশি অধ্যাপকেরাও এ প্রতিষ্ঠানে এসে বক্তৃতা করেছেন।
আইবিএসের গবেষণা কার্যক্রম
এই ইনস্টিটিউটে গবেষণা পরিচালিত হয় দুটি পর্যায়ে—এমফিল ও পিএইচডি। প্রতিবছর ৩০ জন গবেষক গবেষণার সুযোগ পান। তাঁদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম কোনো পাস নম্বর নেই। সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রথম ৩০ জনই ভর্তির সুযোগ পান। সুযোগপ্রাপ্ত গবেষকদের এক বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক কোর্সওয়ার্ক করতে হয়। কোর্সওয়ার্ক শেষে পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ক্লাস উপস্থিতি এবং ৬০ শতাংশ সেমিনার উপস্থিতি থাকা জরুরি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গবেষকেরা গবেষণার বিষয় নির্বাচন করে কাজ শুরু করেন।
গবেষণার সুযোগ-সুবিধা
আর্থিক সংকটের কারণে গবেষণার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রতিষ্ঠানটি গবেষকদের ফেলোশিপ দেয়। পিএইচডি গবেষকেরা তিন বছর মেয়াদে ২০ হাজার টাকা এবং এমফিল গবেষকেরা দুই বছর মেয়াদে ১৫ হাজার টাকা হারে ফেলোশিপ পান। ২০২২ সাল থেকে পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপও চালু হয়েছে। প্রতিবছর একজন গবেষক এই ফেলোশিপ পান। এই গবেষককে মাসে ৫০ হাজার টাকা হারে ফেলোশিপ দেওয়া হয়।
আবাসিক ভবন ও একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও আছে আইবিএসের। আছে শক্তিশালী অ্যালামনাই। আইবিএসের স্মারক তহবিল থেকে তিনটি পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্যে গবেষণার জন্য ‘জোহরা শামসুন্নাহার সাহিত্য পুরস্কার’, ইতিহাস বিষয়ে গবেষণার জন্য ‘সফর আলী আকন্দ পিএইচডি গবেষণা প্রণোদনা পুরস্কার’ এবং এক বছর মেয়াদি কোর্সওয়ার্কে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ‘আনোয়ারুল হক ও শামসুন্নাহার হক স্মৃতি পুরস্কার’।
অর্জন ঝুলি
আইবিএস থেকে এখন পর্যন্ত ১০৭ জন এমফিল ও ৫০০ জন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে ১২ জন এমফিল ও ১০০ জন পিএইচডি গবেষক গবেষণাকর্মে যুক্ত আছেন। নিয়মিত গবেষণার পাশাপাশি দেশ–বিদেশের খ্যাতনামা মানুষদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশেষ বক্তৃতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালা ও সম্মেলন আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া প্রতিবছর আইবিএস থেকে দ্য জার্নাল অব দ্য ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি ইংরেজি এবং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ জার্নাল নামে একটি বাংলা জার্নাল প্রকাশিত হয়। গত পাঁচ দশকে আইবিএস থেকে বাঙালির আত্মপরিচয়, বাংলার ইতিহাস: মোগল আমল, বিশ শতকের বাংলা, রাজশাহী মহানগরী: অতীত ও বর্তমান, জাগরণ ও অভ্যুদয়, বাংলাদেশের ভাষানীতি ও ভাষা-পরিকল্পনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চর্চা: দেশে বিদেশে শিরোনামে একযোগে ১০টি গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছে। এসব বইয়ে বাংলাদেশবিষয়ক গবেষণার বিবরণ সংকলিত আছে।
আইবিএসের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজিমুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য ও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রতিষ্ঠান আইবিএস। বাংলাদেশকে জানা, বাংলাদেশকে জানানো এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশবিষয়ক গবেষণার একমাত্র ও অনন্য প্রতিষ্ঠান আইবিএস। এখানে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা হয়।’
ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ফেসবুক পেজে চিরকুটের ‘জাদুর শহর’
মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।
এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।