সম্প্রতি দেশে যা ঘটছে এতে নিজের সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত অনেক মাতাপিতা । ভয়ংকর ব্যাপারটা হলো আপনার সন্তানকে যৌন হয়রানি করতে পারে, এমন কেউ হয়তো আপনার সামনে দিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে আপনি বুঝতেও পারছেন না । কী করে বুঝবেন কোন মানুষ আপনার সন্তানের ক্ষতি করতে চাইছে ?
পত্রপত্রিকায় শিশু হয়রানির খবর শুনলেও অনেক মাতাপিতা ভাবেন তিনি যেহেতু ভদ্রসমাজে বাস করে তাই তার শিশু এসব থেকে নিরাপদ । কিন্তু এটা মোটেই ঠিক ধারণা না । যেসব শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে দেখা যায় তাদের ১০ জনের মাঝে ৯ জনেরই ক্ষতি করেছে কাছের মানুষ । এর মাঝে রয়েছে আত্মীয়, পারিবারিক বন্ধু শিক্ষক এমনকি ধর্মপ্রচারকেরা । সাধারণত তারা শিশুদের ভুলিয়ে লোভ দেখিয়ে তাদের কাছে টানে , জোর খাটিয়ে নয় । বাচ্চারা সাধারণত সবকিছুর ব্যাপারেই কৌতূহলী হয়ে থাকে । এসব মানুষ তারই সুযোগ ওঠায় । বাচ্চাদের সাথে তারা এমন ভাবে মিশে যে আপনিও তার মিষ্টি কথায় ভুলতে বাধ্য । আপনার এক মুহূর্তের অসাবধানতায় আপনার সন্তানের শরীর ও মনের যে কী ক্ষতি হয়ে যাবে আপনি তা টেরও পাবেন না । আমাদের আশেপাশে, সাধারণ মানুষের মাঝে এমনকি আমাদের পরিবারেও লুকিয়ে থাকতে পারে এমন মুখোশধারী বিকৃত মানসিকতার মানুষ । কিন্তু কী করে বুঝবেন একজন মানুষ আপনার সন্তানের যৌন হয়রানি করতে পারে ? কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা জেনে রাখাটা জরুরী ।
১। বাচ্চার প্রতি অতি আগ্রহ:
বাচ্চার বেবি সিটার, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক, হোম টিউটর এ ধরণের মানুষেরা বাচ্চাকে পড়াশোনা বা আঁকিবুঁকিতে সাহায্য করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি বেশি বেশি আগ্রহ দেখায়, বাচ্চার আরো কাছে আসতে চায় তাহলে পিতামাতার সাবধান হতে হবে । এ ধরণের মানুষের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা নিজের বয়সী মানুষের তুলনায় বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেই বেশি আগ্রহী। বিশেষ করে সে যদি বাচ্চার সাথে একা সময় কাটাতে চায় তবে অবশ্যই তার ওপর চোখ রাখতে হবে ।
২। অযথাই সন্তানের শরীরে কেউ হাত দিচ্ছে কি না লক্ষ্য করুন:
অনেকেই আছে খেলার সময় বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরছে, তার গায়ের ওপর ঢলে পড়ছে, তাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, চুমু দিচ্ছে । বাচ্চারা এটা পছন্দ না করলেও মাতাপিতা ভাবছেন এতে দোষের কী আছে ? কিন্তু শিশুদের যৌন হয়রানি যারা করে তাদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা এমন খেলার ছলে শিশুদের শরীরে হাত দেয় আপত্তিকরভাবে । ব্যাপারটা বাচ্চারা বুঝতে পারে এবং এ কারণে তাদের কাছে ঘেঁষতে চায় না । অভিভাবক হিসেবে আপনারও উচিৎ এ দিকে খেয়াল রাখা । বাচ্চা যদি কারও সাথে খেলতে না চায় তবে সেই মানুষটিকে দূরে রাখাই শ্রেয় ।
৩। বাচ্চার আশেপাশে কেউ আপত্তিকর কথাবার্তা বলছে কি না শুনুন:
আপনার সন্তান সামনে আছে, এর পরেও কেউ অশ্লীল জোক বলছে, আজেবাজে শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে চলেছে, এমন ব্যক্তির থেকে সাবধান থাকুন । এ ছাড়া সে যদি আপনার বাড়ন্ত সন্তানের শরীর নিয়ে কোনো মন্তব্য করে, তাহলেও সাবধান থাকা জরুরী। এসব মানুষ সাধারণত পর্ণোগ্রাফির প্রতি আগ্রহী থাকে এবং অন্যদের ছোট করে দেখতে পছন্দ করে । এদের মাঝে বিবাহিত এবং সন্তান আছে এমন মানুষও থাকে ! এই ধরণের মানুষকে আপনার শিশুর জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়াই ভালো ।
৪। নিজের সন্তানের কাছ থেকে জানুন:
বাংলাদেশে এই ব্যাপারটা প্রচুর হয়। পরিচিত কেউ সন্তানকে লাঞ্ছিত করছে, সন্তানের শরীরে হাত দিচ্ছে- এ ব্যাপারটি সন্তানের কাছ থেকে শুনেও তাতে কান দেন না বাবা মায়েরা । সরাসরি না বলেও অনেকভাবে সন্তানেরা এসব ব্যাপার বোঝাতে চেষ্টা করে । সন্তান যখন বলে সে ওই ব্যক্তির কোলে বসতে চায় না, ওই মানুষের বাসায় যেতে চায় না, তখন আপনার হয়তো মনে হবে সন্তান বায়না করছে । কিন্তু তার এই কথার পেছনে আসলে সে কী বলতে চাইছে, সন্তানের নিরাপত্তার জন্যই আপনার তা জানা প্রয়োজন ।
৫। সন্তানের পিতামাতার বিশ্বাস অর্জন:
শুরুতে অপরিচিত থাকলেও একজন পেডোফাইল বা শিশু যৌন নির্যাতক সন্তানের পিতামাতার আস্থা অর্জন করতে চায় এবং এ উপায়ে শিশুর কাছাকাছি হবার সুযোগ খোঁজে । এরা খুব সুন্দর করে, গুছিয়ে কথা বলে এবং কথার প্যাঁচে এমনভাবে মানুষকে আটকায় যে নিজের আবদারটুকু অর্জন করতে তার সমস্যা হয় না । একটা সময়ে আপনি তাকে বিশ্বাস করে হয়তো তার হাতে কিছু সময়ের জন্য বাচ্চাকে রেখে নিশ্চিন্তে অন্য কোথাও গেলেন, এইটুকু সময়ের সুযোগ নিয়ে সে আপনার সন্তানের সর্বনাশ করে দিতে পারে। তাই সন্তানের ব্যাপারে কাউকেই বিশ্বাস করে বসবেন না ।