Friday , 20 September 2024

যৌন রোগ থেকে বন্ধ্যাত্ব এবং হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি

যৌন রোগ নিয়ে কথা বলতে চান না বেশিরভাগ নারী ও পুরুষ। কিন্তু যৌন মিলন যদি নিরাপদ না হয় তা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।যৌন রোগের কিছু লক্ষণ হয়ত অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। তবে এমন যৌন রোগ আছে যা আপনার বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

যৌন
যৌন রোগ থেকে বন্ধ্যাত্ব এবং হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি

যেসব যৌন রোগ সবচেয়ে বেশি হয়

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ত্বক ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুল আহসান বলছেন, যৌন সঙ্গী যদি আক্রান্ত থাকেন তাহলে তার যৌনাঙ্গের তরল পদার্থ এবং মুখের লালায় উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

তিনি বলছেন, বাংলাদেশে এক সময় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যেত গনোরিয়া এবং সিফিলিস। তবে ইদানীং ভাইরাসজনিত যৌন রোগই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

“যেমন ইদানীং আমরা হারপিস অনেক পাচ্ছি। এটা একবার শরীরে প্রবেশ করলে পুরোপুরি দূর করা যায় না। শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। কিন্তু সঙ্গীর শরীরে প্রবেশ করে। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন পরে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। চিকিৎসা করে এটা দমিয়ে রাখা যায়। নিয়মিত ঔষধের উপর থাকতে হয়। কিন্তু পুরোপুরি সেরে যায় না”, বলছিলেন ডা. কামরুল আহসান।

মূলত সাতটি যৌন রোগ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। গনোরিয়া, সিফিলিস, জেনিটাল হারপিস ছাড়াও ক্লামাইডিয়া, যৌনাঙ্গে আঁচিল, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, হেপাটাইটিস বি এর মধ্যে অন্যতম।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএস বলছে, গর্ভাবস্থায় কোন নারীর সিফিলিস থাকলে রোগটি সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিলেও এটি হতে পারে।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস হলে প্রায়শই পুরুষদের ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি সঙ্গীর শরীরে তা ছড়ায়।

অনেকের মধ্যে ধারণা রয়েছে যৌন রোগ একই কাপ, গ্লাস, প্লেট, চামচ, রেজর ব্যাবহার করলেও ছড়াতে পারে। এমনকি ‘টয়লেট সিট’ থেকেও হতে পারে এমন আতঙ্ক বোধ করেন অনেকে। যা সঠিক নয়।

ওরাল সেক্সের মাধ্যমেও যৌন রোগ ছড়াতে পারে। সমকামী নারী পুরুষের যৌন রোগ হতে পারে।

মাত্র দুই ধরনের যৌনরোগ, হিউম্যান প্যাপালোভা ভাইরাস ও হেপাটাইটিসের কার্যকর ভ্যাক্সিন রয়েছে।

যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন

ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক কিশওয়ার সুলতানা বলছেন, “প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া, তলপেটে ব্যথা হলে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। মনে করে হয়ত ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) হয়েছে। পানি বেশি খেলে ঠিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে নারীরা অনেকে মনে করে এটি হয়ত মাসিকের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু এগুলোও যৌন রোগের লক্ষণ।”

নারীত্ব, যৌনতা, আবেগ, রজঃনিবৃত্তির প্রভাব নিয়ে যত প্রশ্ন

পুরুষেরা যেসব অসুখ নিয়ে লজ্জা ও সংকোচ বোধ করেন

তিনি বলছেন, যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হওয়া, কোন ধরনের অস্বাভাবিক ক্ষরণ, যৌনাঙ্গ এবং তার আশপাশে গোটা, ফুসকুঁড়ি, র‍্যাশ, আঁচিল, চুলকানি, ঘা, জ্বালাপোড়া অনুভূতি, দুর্গন্ধ, যৌন মিলনের সময় ব্যথা ও রক্তক্ষরণ এগুলোই মুল লক্ষণ। অনেক সময় ঠোঁট ও তার আশপাশ, হাতের তালুতেও ফুসকুঁড়ি থাকতে পারে।

এসব লক্ষণের সাথে জ্বর থাকতে পারে। সবধরনের যৌন রোগের একই লক্ষণ থাকে না। তবে মোটা দাগে এসব লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

“অনেকেই ভাবেন হেপাটাইটিস বি একটা লিভারের অসুখ। এটি যে যৌনরোগও বটে তার ধারনাই নেই বেশিরভাগ মানুষের। এটি একধরনের ভাইরাসজনিত যৌনরোগ। এটা হলে যৌনাঙ্গে কিছু প্রকাশ পায় না। এর লক্ষণগুলো অন্য যৌনরোগের চেয়ে আলাদা। যেমন বমি ভাব ও পেট খারাপ হবে, খাবার রুচি চলে যাবে, ক্লান্ত লাগবে, পেশাব ও ত্বকের রঙে পরিবর্তন হবে”, বলছিলেন অধ্যাপক সুলতানা।

কাম বাসনা কি শুধু পুরুষের বিষয়, নারীকে কেন নিরুৎসাহিত করা হয়?

যেসব ঝুঁকি বাড়ে

যৌন রোগ শুধু অস্বস্তিকর বিষয় তা নয়। এটি আরো অনেক ধরনের অসুখের কারণ হতে পারে।

এনএইচএস বলছে, যৌনাঙ্গে আঁচিলের উপস্থিতি নারীদের সার্ভিকাল ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

ক্লামাইডিয়া ও গনোরিয়া থেকে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

সিফিলিস মারাত্মক গুরুতর পর্যায়ে গেলে একজন ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারেন। যকৃতের কার্যক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে যাতে মানসিক বিকার তৈরি হতে পারে।

যেভাবে সাবধান হবেন

এনএইচএস বলছে, একের অধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সংসর্গে অভ্যস্ত নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।ভ্যাজাইনিসমাস: যে ব্যাধি যৌনমিলনে শুধুই যন্ত্রণা দেয়আমার চোখে বিশ্ব: যৌন সহিংসতায় আছে এইডস ছড়ানোর ঝুঁকি

সাবধান হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিবার কনডম ব্যবহার করা। একাধিক যৌন সঙ্গী নয় নির্দিষ্ট একজনের সাথে যৌনমিলনে আবদ্ধ হওয়া।

কিছুদিন পরপর নিজের এবং সঙ্গীর পরীক্ষা করিয়ে নেয়া।

কোন লক্ষণ থাকলে সঙ্গীর কাছ থেকে বিষয়টি না লুকিয়ে তা প্রকাশ করার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. কামরুল আহসান।


“কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে শুধু নিজে গেলাম ডাক্তারের কাছে কিন্তু সঙ্গীকে না জানালে নিজের সেরে গেল কিন্তু সঙ্গী আক্রান্ত থেকে গেল। অতএব দুজনেই একসাথে চিকিৎসকের কাছে আসবেন। আমরা লক্ষণ শুনে, চোখে দেখে এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবার পর চিকিৎসা দেব।”, বলছিলেন তিনি।

নারীদের অর্গাজম কম হয় কেন?

পরিপাটি রাখুন নিজেকে ৭টি উপায়ে

 

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

প্রাচীন

প্রাচীন মানুষদের যৌন-পরামর্শ

প্রাচীন মানুষদের যৌন-পরামর্শ। কখনও কখনও প্যাপিরাস বা কাগজে নারীরা তাদের চিন্তাভাবনা লিখে রাখতেন। গ্রীক দার্শনিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *