Friday , 18 October 2024

মেয়েদের সাদা স্রাব নিয়ে কিছু কথা

মেয়েদের সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক। তবে পরিমাণ, রঙ ও গন্ধে পরিবর্তন আসলে সেটি শঙ্কার কারণ হতে পারে।মেয়েদের যোনিপথ বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে স্রাব যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই মাসিক শুরু হওয়ার ১–২ বছর আগে থেকে সাদা স্রাব যাওয়া শুরু হয়। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট বয়সের পর মাসিক চিরতরে বন্ধ বা মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে।

মেয়েদের
মেয়েদের সাদা স্রাব নিয়ে কিছু কথা

মেয়েদের সাদা স্রাব নিয়ে কিছু কথা

স্রাবের স্বাভাবিক পরিমাণ, রঙ ও গন্ধে পরিবর্তন আসলে সেটি শঙ্কার কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে সংকোচ থাকার কারণে অনেকের জানাশোনা খুব কম। ফলে অসুস্থ হলেও অনেকে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। আবার অনেকে সুস্থ থাকার পরেও সঠিক ধারণার অভাবে সাদা স্রাব নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন।

সাদা স্রাব কেন হয়.?

সাদা স্রাব শরীরের কোনো ক্ষতি করে না, বরং নারীদেহে সাদা স্রাব তৈরি করার মাধ্যমে শরীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে—

  1. মাসিকের রাস্তা আর্দ্র ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
  2. মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়

স্রাবের পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানায় অনেকে আশঙ্কা করেন যে তাদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন যে অতিরিক্ত সাদা স্রাবের কারণে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়া ও দুর্বল অনুভব করার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমন ধারণা থেকে সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় জানতে চায়। এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

সাদা স্রাব কতটুকু স্বাভাবিক?

সাদা স্রাবের পরিমাণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। আরেকজনের জন্য যেটি অতিরিক্ত সাদা স্রাব সেটি আপনার জন্য স্বাভাবিক হতে পারে। আবার একই ব্যক্তির মাসের একেক সময়ে একেক পরিমাণ স্রাব যেতে পারে। শরীরে হরমোনের পরিমাণের তারতম্যের কারণে এমনটা হয়ে থাকে।

সাধারণত দিনে ২ থেকে ৫ মিলিলিটার সাদা স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো এরচেয়ে কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।[২] নিচে স্যানিটারি প্যাডে ২ মিলি ও ৫ মিলি পরিমাণের মধ্যে তুলনা দেখানো হয়েছে। দুটি পরিমাণের মধ্যে অনেক পার্থক্য মনে হলেও দুটি পরিমাণই স্বাভাবিক।

স্বাভাবিক সাদা স্রাবের তুলনা

মাসিক চক্রের একেক সময়ে স্রাবের ঘনত্বে একেক ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। স্রাব সাধারণত পাতলা থাকে, তবে কখনো কখনো ঘন ও আঠালো হতে পারে।

মাসের একটি সময়ে স্রাবের ঘনত্ব ডিমের সাদা অংশের মতো হতে পারে। সেই সময়ে স্রাবকে আঙুল দিয়ে টেনে কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও সেটি সহজে ভাঙে না। এমন স্রাব যাওয়ার সময়ে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

স্বাভাবিক স্রাব মূলত দুটি রঙের হতে পারে—স্বচ্ছ ও বর্ণহীন অথবা দুধের মতো সাদা। স্বচ্ছ ও বর্ণহীন স্রাব বাতাসের সংস্পর্শে এসে সাদা অথবা হলুদ রঙ ধারণ করতে পারে।স্বাভাবিক স্রাবে কোনো দুর্গন্ধ থাকে না।

অতিরিক্ত সাদা স্রাব

নিজের জন্য সাধারণত কতটুকু স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক—এই সম্পর্কে প্রায় সবারই কম বেশি একটা ধারনা থাকে। আপনার জন্য যতটুকু স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক তার থেকে অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া শুরু করলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

নিচের পাঁচটি ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত সাদা স্রাব হতে পারে—

  1. মাসিকের ঠিক আগে
  2. দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে
  3. গর্ভবতী অবস্থায়
  4. যৌন উত্তেজনার সময়ে
  5. জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন করলে।

তবে হঠাৎ সাদা স্রাব অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে গেলে তা মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না নিলে জরায়ুসহ অন্যান্য অঙ্গে ইনফেকশন ঘটে গর্ভধারণ জনিত নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অস্বাভাবিক স্রাব

পাঁচ ধরনের স্রাবের ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। এই ধরনের স্রাব ইনফেকশন—এমনকি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে।

১. সাদা রঙের চাকা চাকা স্রাব
এক্ষেত্রে সাদা স্রাব দেখতে দই অথবা পনিরের মতো সাদা ও চাকা চাকা হয়। তবে সাধারণত কোনো গন্ধ থাকে না। যোনিপথে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে এমন অস্বাভাবিক সাদা স্রাব হতে পারে। এটি অনেকের কাছে ‘ঈস্ট ইনফেকশন’ নামেও পরিচিত।

যোনিপথে কোনো কারণে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা কমে গিয়ে এক ধরনের ফাঙ্গাসের সংখ্যা বেড়ে গেলে এই রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন, কোনো অসুস্থতার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে সেটি মাসিকের রাস্তার ভালো জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারে। সেই সুযোগে ফাঙ্গাস অনেক বংশবিস্তার করলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

এক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়—

  • অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া
  • যোনিপথের আশেপাশে প্রচুর চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হওয়া
  • প্রস্রাব ও সহবাসের সময়ে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি হওয়া
  • যোনিপথে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা নিলে এটি সহজেই সেরে যায়।

এক্ষেত্রে ডাক্তার মুখে খাওয়ার অথবা মাসিকের রাস্তা দিয়ে ঢোকানোর ঔষধ দিতে পারেন। সাধারণত চিকিৎসা শুরু করার ১–২ সপ্তাহের মধ্যেই এই ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন সেরে যায়।

তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই রোগ বারবার দেখা দেয়। যেমন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে এই রোগ পুনরায় দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্যা বারবার হতে থাকলে ডায়াবেটিস আছে কি না সেটি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। বারবার ইনফেকশন হলে লম্বা সময় ধরে—এমনকি ৬ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে হতে পারে।

ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে আর্টিকেলের শেষের অংশে উল্লিখিত পরামর্শগুলো মেনে চলুন।

২. ধূসর স্রাব
যোনিপথের এক ধরনের ইনফেকশনে ধূসর বা ছাই রঙের স্রাব দেখা যায়। এটিকে ‘ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস’ বলা হয়। এক্ষেত্রে স্রাবে তীব্র দুর্গন্ধ থাকে। তবে কোনো ব্যথা অথবা চুলকানি থাকে না।

কোনো কারণে যোনিপথে থাকা জীবাণুগুলোর ভারসাম্যে পরিবর্তন হলে যোনিপথের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। তখন এই রোগ দেখা দিতে পারে।

এটি যৌনবাহিত রোগ নয়, তবে যৌন সহবাস করলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

এক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়—

  • স্রাব ধূসর ও পানির মতো পাতলা হয়ে যাওয়া
  • অনেকটা পচা মাছের মতো দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাওয়া। বিশেষ করে সহবাসের পরে এমন দুর্গন্ধ হয়
  • উল্লেখ্য, এই রোগে যোনিপথের আশেপাশে চুলকানি কিংবা ব্যথা থাকে না

এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এটি মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট কিংবা মাসিকের রাস্তায় দেওয়ার ক্রিম অথবা জেল হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ঔষধটি বেছে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, একবার এই ইনফেকশন হওয়ার ৩–৬ মাসের মধ্যে আবারও রোগটি দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লম্বা সময় ধরে—এমনকি ছয় মাস পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে আর্টিকেলের শেষের অংশে উল্লিখিত পরামর্শগুলো মেনে চলুন।

৩. সবুজ স্রাব
গনোরিয়া রোগে সবুজ রঙের ঘন স্রাব যেতে পারে। ‘নাইশেরিয়া গনোরিয়া’ নামের ব্যাকটেরিয়া এই রোগ সৃষ্টি করে।

গনোরিয়া একটি যৌনবাহিত রোগ। কনডম জাতীয় সুরক্ষা ছাড়া এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সহবাস করলে এই রোগটি হতে পারে।

এক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়—

  • প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হওয়া
  • তলপেটে ব্যথা হওয়া
  • প্রস্রাব ও সহবাসের সময়ে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি হওয়া
  • দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে যোনিপথে রক্তক্ষরণ হওয়া
  • এসব ছাড়াও কখনো কখনো জ্বর আসতে পারে এবং সহবাসের সময়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

এক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা না করালে ইনফেকশন জরায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে পরবর্তীতে গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি হওয়া সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই গনোরিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তা ছাড়া যেহেতু রোগটি সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই রোগ ধরা পড়লে সঙ্গীর চিকিৎসা করানোও গুরুত্বপূর্ণ। না হলে চিকিৎসার পরেও আবার গনোরিয়া ছড়াতে পারে।

সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করে গনোরিয়া পুরোপুরি সারিয়ে ফেলা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্স শেষে পুনরায় টেস্ট করে রোগটা পুরোপুরি সেরেছে কি না সেটি দেখতে হয়।

রোগমুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের রোগ এড়াতে কনডম জাতীয় সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত।

উল্লেখ্য, গনোরিয়া রোগে স্রাবের রঙ সবুজ না হয়ে নিচের ছবির মতো হলুদ রঙেরও হতে পারে—

হলুদ রঙের স্রাব

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ক্ল্যামিডিয়া নামক অপর একটি যৌনবাহিত ইনফেকশনে গনোরিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তবে স্রাবের রঙে কিছুটা ভিন্নতা থাকে।এই দুটি রোগ ছড়ানোর মাধ্যম, জটিলতা ও চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় একই রকম। তবে ক্ল্যামিডিয়া এর চিকিৎসায় ভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগটি নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারবেন।

৪. সবুজাভ হলুদ স্রাব
‘ট্রিকোমোনায়াসিস’ নামক যোনিপথের ইনফেকশনে এমন সবুজের সাথে হলুদ মেশানো রঙের হতে পারে। ‘ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস’ নামের এক ধরনের জীবাণুর কারণে এই রোগ হয়।

সবুজাভ হলুদ স্রাব

এটিও একটি যৌনবাহিত রোগ। কনডম জাতীয় সুরক্ষা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সহবাস করলে এই রোগটি হতে পারে। তা ছাড়া যেহেতু রোগটি সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই রোগ ধরা পড়লে সঙ্গীরও চিকিৎসা করানো গুরুত্বপূর্ণ।[১৪] না হলে চিকিৎসার পরেও আবার ইনফেকশন ছড়াতে পারে।

ট্রিকোমোনায়াসিস হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়—

  • ঘন অথবা পাতলা কিংবা ফেনাফেনা স্রাব যাওয়া
  • স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এতে কখনো কখনো মাছের মতো আঁশটে গন্ধ থাকতে পারে
  • যোনিপথের আশেপাশে ব্যথা, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হওয়া। কখনো কখনো দুই উরুর মধ্যবর্তী স্থানেও চুলকানি হতে পারে
  • যোনিপথ লাল হওয়া কিংবা ফুলে যাওয়া
  • প্রস্রাব ও সহবাসের সময়ে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি হওয়া

অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের সাহায্যে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্স শেষে পুনরায় টেস্ট করে রোগটা পুরোপুরি সেরেছে কি না সেটি দেখা উচিত।

রোগমুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের রোগ এড়াতে কনডম জাতীয় সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত।

ট্রিকোমোনায়াসিস, গনোরিয়া ও ক্ল্যামিডিয়া রোগের অনেক রোগীর মধ্যেই কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। তখন তারা নিজের অজান্তে অন্যের মাঝে এসব ইনফেকশন ছড়িয়ে দিতে পারে। এটা প্রতিরোধের উপায় হলো সহবাসের সময়ে কনডম ব্যবহার করা।

৫. লালচে স্রাব
লালচে স্রাব কখনো কখনো স্বাভাবিক হতে পারে। আবার অনেক সময় ইনফেকশন ও ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে।

মাসিকের শুরুতে স্বাভাবিকভাবেই একটু লালচে স্রাব যেতে পারে। মাসিকের রক্তের সাথে সাদা স্রাব মিশে এমন রঙ হয়। নিচের ছবিতে এই রঙের স্রাব দেখানো হয়েছে—

লালচে স্রাব
লালচে স্রাবমাসিকের শেষের দিকে কালচে স্রাব যেতে পারে। রঙটি কেমন হতে পারে সেটি নিচের ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে—

কালচে স্রাব

মাসিকের আগে-পরে এই ধরনের লাল স্রাব হলে সেটিকে সাধারণত স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক জটিলতার কারণে লালচে স্রাব হতে পারে।

নিচের তিনটি ক্ষেত্রে যোনিপথ দিয়ে লালচে স্রাব অথবা রক্ত গেলে জরুরি ভিত্তিতে গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে—

১. মাসিকের সময় ছাড়া লালচে স্রাব বা রক্ত যাওয়া: এটি জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ।[১৮] কখনো কখনো স্বাভাবিক কিছু কারণেও এমন হতে পারে। যেমন: জন্মনিরোধক পিল বা বড়ি খাওয়া। তবে প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

২. সহবাসের পরে রক্তপাত হওয়া: সহবাসের সময়ে মাসিকের রাস্তায় আঘাত পেলে কিছুটা রক্তপাত হতে পারে। আবার বিভিন্ন ইনফেকশনের কারণেও এমন হতে পারে।[১৯] কখনো কখনো জরায়ুমুখের ক্যান্সার[২০] অথবা যোনিপথের ক্যান্সারে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।[২১] তাই ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিত।

একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুমুখে ক্যান্সারের চিহ্ন শনাক্ত করা যায়। এই পরীক্ষার নাম ভায়া (VIA) পরীক্ষা। ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের পাঁচ বছর পর পর এই পরীক্ষাটি করতে হয়।

পরীক্ষাতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে রোগীকে একটি লাল কার্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ক্যান্সার আছে কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যদিকে পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক হলে একটি আকাশি নীল রঙের কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করতে হয় এবং পরবর্তী পরীক্ষার সময়ে সাথে নিয়ে যেতে হয়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এই পরীক্ষাটি করানো হয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই পরীক্ষা করানোর সুব্যবস্থা রয়েছে।

তাই ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের এই পরীক্ষা সম্পর্কে অবহিত করুন এবং নিয়মিত চেকআপে যেতে উৎসাহিত করুন।

৩. মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে লাল স্রাব বা রক্ত যাওয়া: ‘মেনোপজ’ অর্থ মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত ৪৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের এক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকলে তাদের মেনোপজ হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।[২২]

মেনোপজের পরে যোনিপথে যেকোনো ধরনের রক্তক্ষরণই শঙ্কার কারণ। এটা জরায়ুর ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।[২৩] তা ছাড়াও অন্যান্য সমস্যার (যেমন: জরায়ুমুখের পলিপের) লক্ষণ হতে পারে।

মেনোপজের পরে যোনিপথে কেবল একবারের জন্য রক্তক্ষরণ হলেও অথবা খুব সামান্য রক্ত গেলেও গাইনী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।[২৪] এমনকি স্রাব দেখতে পুরোপুরি রক্তের মতো না হয়ে গোলাপি, কালচে কিংবা বাদামি হলেও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

ক্যান্সার হয়ে থাকলে যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তত ভালোভাবে সেটির চিকিৎসা করা যায়।

এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। ক্যান্সার ছাড়াও অন্যান্য কারণে এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিন্তু যেহেতু ক্যান্সারের একটি সম্ভাবনা থাকে, তাই এসব ক্ষেত্রে হেলাফেলা না করে দ্রুত ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।

মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হলেও নারীরা, বিশেষ করে বয়স্ক নারীরা, লজ্জার কারণে অনেকসময় বিষয়টি এড়িয়ে যান। মাসিকের রাস্তায় অস্বাভাবিক রক্তপাতের ঝুঁকি সম্পর্কে না জানার কারণেও অনেকে বিষয়টি গুরুত্ব দেয় না। ফলে রোগ ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায় এবং ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই আপনার পরিচিত সকল নারীকে, বিশেষ করে বয়স্ক মহিলাদের আজই এই তথ্যটি জানিয়ে সচেতন করুন।

অন্যান্য কারণ

ওপরের কারণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু রোগে অস্বাভাবিক স্রাব দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে একটি রোগ হলো জেনিটাল হার্পিস—যা একটি ভাইরাস ঘটিত যৌনরোগ। তবে এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো যৌনাঙ্গে ছোটো ছোটো ফোস্কা হওয়া।

এ ছাড়া যোনিপথের আশেপাশে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হতে পারে এবং প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা করানো জরুরি।

যোনিপথের রোগ প্রতিরোধের উপায়
যোনিপথ বা মাসিকের রাস্তার ভেতরের অংশ পরিষ্কার রাখার জন্য শরীরের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে আলাদা কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। বরং সুগন্ধি সাবান কিংবা অন্য কিছু দিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যোনিপথের ইনফেকশন হতে পারে।

তাই নিজে নিজে আলাদা করে যোনিপথের ভেতরে পরিষ্কারের চেষ্টা করবেন না। টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে যোনিপথে বিশেষ ধরনের ওয়াশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

যোনিপথ সুস্থ ও জীবাণুমুক্ত রাখতে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—

  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও শুকনো রাখা। যোনিপথের বাইরের অংশটুকু পানি ও সাধারণ সাবান দিয়ে ধোওয়ার পরে ভালোমতো শুকিয়ে নিতে হবে
  • যোনিপথে সুগন্ধি সাবান, শাওয়ার জেল, বিশেষ ওয়াশ কিংবা ডুশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা[২৫]
  • যোনিপথে সুগন্ধি ওয়েট টিস্যু অথবা পারফিউম ব্যবহার না করা
  • সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরা
  • খুব টাইট বা আঁটসাঁট অন্তর্বাস ও পায়জামা না পরা
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ব্যবহার না করা
  • নিয়মিত ‘ভায়া’ (VIA) পরীক্ষা করা

সাধারণ জিজ্ঞাসা

  1. সাদা স্রাব কেন হয়?
  2. সাদা স্রাব শুরু হওয়া কীসের লক্ষণ?
  3. প্রতিদিন সাদা স্রাব যাওয়া কি স্বাভাবিক?
  4. সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ?
  5. সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় কী?

সন্তান জন্মদান পরবর্তী সহবাসের নিওম

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

সহবাস

সহবাস বা যৌনসঙ্গম নিয়ে ভুল ধারণা

সহবাস বা যৌনসঙ্গম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক রকম ভুল ধারণা, কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস প্রচলিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *