জীবনে টাকার গুরুত্ব অসীম।এই করোনাকালে এসে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি সঞ্চয় প্রতিটি মানুষের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মানুষ কেন, ছোটো-বড়ো যে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও সঞ্চয় যে কতটা প্রয়োজনীয় তা এই করোনাকাল না এলে কি আমরা বুঝতে পারতাম! ব্যক্তির সংসার চালানো থেকে শুরু করে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকেই নগদ টাকার অভাবে ভুগছেন। অনেক বড়ো বড়ো ব্যবসা খাত সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার জন্য আবেদন করে চলেছে।
সমাজের প্রচলিত প্যাটার্ন হচ্ছে—মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা বেশি সঞ্চয় করেন। আর উচ্চবিত্তরা সঞ্চয় করার চাইতে লগ্নি বা বিনিয়োগ করেন। আর নিম্ন আয়ের তো নুন আনতে পানতা ফুরানোর দশা। সঞ্চয় করার ক্ষমতা কম। তারপরও সবাই কমবেশি সঞ্চয় করেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঞ্চয়ের পরিধি এবং বিনিয়োগের পরিধি একই। কেননা, বিনিয়োগের অর্থ আসে সঞ্চয় থেকে। মানুষ বেশি বেশি সঞ্চয় করলে ব্যাংকগুলো সেই টাকা বেশি বেশি প্রতিষ্ঠানে লগ্নি করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের সঞ্চয়ের জন্য মূলত ব্যাংক এবং অন্যান্য ননব্যাংকিং আর্থিক সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়। ব্যাংকগুলোও তাদের গ্রাহকরা যেন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন সেটিকে পরিকল্পনা করেই নতুন নতুন সঞ্চয়ী হিসাবের প্রস্তাব সামনে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে সঞ্চয় করতে পারেন ব্যাংক, সরকারি বন্ডে টাকা রেখে। আবার পুঁজিবাজার, মিউচুয়্যাল ফান্ডে লগ্নি করেও সঞ্চয় করতে পারেন। অনেকেই স্বর্ণ, জমি এবং অ্যাপার্টমেন্ট কিনে টাকা সঞ্চয় করেন। যদিও এখন ক্রেডিট কার্ডের যুগ। ব্যাংকে কোনো টাকা না থাকলেও সেরে ফেলতে পারেন বাজার, দিতে পারেন বাচ্চার স্কুলের ফি ও বাড়িভাড়া। সেই টাকা পরে দিলেও চলবে। দুনিয়ায় যখন এ অবস্থায় চলে এসেছে তখন সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা অনেকের কাছেই গুরুত্ব হারিয়েছে। আধুনিক মানুষদের ভাবনা, সঞ্চয় কি সত্যিই খুব জরুরি? তবে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সফল মার্কিন উদ্যোক্তা ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা খরচ করুন।’
করোনাকাল এসে আমার বুঝতে পারছি সঞ্চয় কেন এত জরুরি। যখন অফিসের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। লকডাউনের কারণে ধুঁকছে প্রতিটি খাত। তখন সঞ্চয়ের টাকাই প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার কাছে। তাই সঞ্চয় হচ্ছে বিপদের বন্ধু। তবে আর্থিক স্বচ্ছলতার ভাবনা একেক জনের কাছে একেক রকম। কেউ মনে করে, তিনবেলা খাবার জোটানোই সচ্ছলতা। কারো কাছে সংসারের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপনই সচ্ছলতা। তবে বৈশ্বিকভাবে সচ্ছলতার মানদণ্ড হচ্ছে—আপনি যদি মাসের শেষে চাকরির চেকের ওপরেই কেবল নির্ভরশীল না হন তাহলে আপনাকে সচ্ছল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তারপরেও সঞ্চয় করুন। বাড়ি, গাড়ি কেনার কথা ছেড়েই দিন; এই আজকের মতো অচলাবস্থার জন্যও সঞ্চয় কি খুব জরুরি নয়!
ধরুন এখন আপনার একটা ভালো চাকরি আছে। যা আয় করেন তা দিয়েই মিটে যাচ্ছে সব প্রয়োজন। তখন আপনি ভাবতেই পারেন কী প্রয়োজন সঞ্চয়ের! এমনটা ভাবলে সত্যিই প্রয়োজন নেই সঞ্চয়ের। তবে আপনি যদি আপনার এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চান। যদি চান, এখন যা করছেন এর চেয়ে ভালো অবস্থানে যেতে, তখন? কিংবা যদি আপনার এই চাকরিটি এখনই চলে যায়, তখন? কিংবা যিনি ব্যবসায়ী তার ব্যবসা বাড়ানোর প্রযোজন হয় অথবা ব্যবসায় মন্দা চলতে থাকে। তখন কীভাবে পার করবেন সেই বাধা! তাই আপনি যদি আরো সচ্ছল, স্বাচ্ছন্দ্যে, আর্থিকভাবে আরো নিশ্চিন্ত জীবন চান তবে সঞ্চয় আপনার একমাত্র উপায়।
জীবনে অল্প করে হলেও সঞ্চয় শুরু করুন। এ কাজটি শুরু করতে পারেন মাটির ব্যাংক দিয়ে। প্রতিদিন মাটির ব্যাংকে অল্প করে টাকা রাখুন। একসময় দেখবেন এই জমানো টাকা একটি বিশাল অঙ্কে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে চলুন। অযথা বাইরে খাওয়া কমিয়ে দিন। সহজে টাকা জমানোর একটি উপায় হলো, বাইরে খাওয়া কমিয়ে দেওয়া। সপ্তাহের একটি দিন ঠিক করুন সেদিন কোনো খরচ করবেন না। দেখবেন খরচ অনেকখানি কমে গেছে। কত টাকা জমাতে চান সেই হিসাব করে বাজেট করুন। প্রতি সপ্তাহে কী কী খরচ আছে—পরিকল্পনা করে নিয়ে সে অনুযায়ী টাকা খরচ করুন। পরিকল্পনার বাইরে খরচ না করার চেষ্টা করুন। একটু টাইট বাজেট করুন, এতে টাকা সঞ্চয় করা সহজ হবে। না হলে দেখবেন বাড়তি টাকা খরচ হয়ে গেছে।
ধানমন্ডির বাসিন্দা বোরহান সরকার বললেন,জীবনে সঞ্চয় করার কোনো বিকল্প নেই। যদি আমরা এখন সঞ্চয় না করি, তাহলে দুঃসময়ে টাকা দরকার হলে আমরা কোথায় পাব? যেহেতু বাংলাদেশে সরকারি চাকরির বাইরে উন্নত দেশগুলোর মতো সাধারণ মানুষের জন্য কোনো অবসর ভাতার ব্যবস্থা নেই। তাই সাধারণ মানুষকে তাদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের ওপরই নির্ভর করতে হয়। সর্বজনীন পাবলিক পেনশন পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপদ জীবনের জন্য ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। কারণ সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত দুর্বল।
ইভানা নামে আরেক জন বললেন, ‘আমরা খুব কম টাকাই সঞ্চয় করতে পারি। তাই তা ব্যাংকে গচ্ছিত না রেখে জীবন বিমা করপোরেশনে পেনশন স্কিম করেছি। এখন বছরে বছরে টাকা জমা দিচ্ছি। স্বামীর বেসরকারি চাকরির অবসরের পর সেখান থেকে মাসে মাসে টাকা পাব।’
কফির প্যাক ত্বককে করে তুলবে উজ্জ্বল জানুন কিভাবে
মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।
এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব