Friday , 18 October 2024

দার্জিলিং ভ্রমণ করুন কম খরচে, কীভাবে যাবেন, কোথায় ঘুরবেন

দার্জিলিং ভ্রমণ! ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে দার্জিলিং এর যে আলাদা কদর আছে, সেটা আর নতুন করে না-ই বা বললাম। বাংলাদেশ থেকে কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণ এর টুকটাক তথ্য আজ শেয়ার করবো। কোথায় কোথায় বেড়ানো যায়, মাস্ট ট্রাই ফুড আইটেম, কী শপিং করা যায়- এগুলো জেনে নিন-

দার্জিলিং ভ্রমণ
দার্জিলিং ভ্রমণ করুন কম খরচে, কীভাবে যাবেন, কোথায় ঘুরবেন

দার্জিলিংয়ে কেন যাবেন

প্রথমেই দার্জিলিং সম্পর্কে কিছু ধারণা দেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এই শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। আর এই কারণে মোটামুটি সারা বছরই ঠান্ডা থাকে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শহর থেকে দেখা যায় বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এখানে আছে পাহাড়ি ঢালে সাজানো চা বাগান, বিখ্যাত টয় ট্রেন আর পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন ‘ঘুম’। পাহাড়, মেঘ যাদের ভীষণভাবে টানে, তাদের জন্য পারফেক্ট ডেস্টিনেশন দার্জিলিং।

কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণ

কীভাবে যাবেন

দার্জিলিং যেতে হলে আগে ইন্ডিয়ান ভিসা নিতে হবে। যাদের ভিসা করা নেই, করতে চাচ্ছেন; তারা ফুলবাড়ি পোর্ট সিলেক্ট করতে পারেন। এতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় এসে ইমিগ্রেশন করে ফুলবাড়ি দিয়ে খুব কম সময়ে শিলিগুড়ি জিপ স্ট্যান্ডে পোঁছাতে পারবেন। আরেকটি রুট হচ্ছে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে চেংড়াবান্ধা হয়ে। তবে এক্ষেত্রে শিলিগুড়ি যেতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। বাংলাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব কম। এবার শিলিগুড়ি এসে আপনি দার্জিলিং যাওয়ার জন্য জীপ, বাস, ট্যাক্সি সবই পাবেন। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে আপনার সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘন্টা।

এখন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে যেতে পারবেন নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত। সেখান থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি, এরপর দার্জিলিং। বাজেট ট্রিপের জন্য আমি রেল রুট সাজেস্ট করবো। বাই এয়ারে সরাসরি দার্জিলিং যাওয়া যায় না, ঢাকা- কলকাতা- বাগডোগরা, শিলিগুড়ি এই রুটে আসতে হবে। বাই রোডে বা ট্রেনে আসলে আপনার খরচ অনেক কম হবে।

কোথায় কোথায় ঘুরবেন?

চলুন জেনে নেই কী কী দর্শনীয় স্থান আছে এখানে-

টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখার সুযোগ মিস করা যাবে না! সেই সৌন্দর্যের সাথে যেন কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। ভোরের আলোয় আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া। শ্বেতশুভ্র বরফের চাদরে মোড়া সেই চূড়া দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন এই টাইগার হিলে।

বাতাসিয়া লুপ

দার্জিলিং শহরের খুব কাছেই অবস্থিত বাতাসিয়া লুপ। এখানে পাহাড়ি টানেলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন জার্নি যেন এক অ্যাডভেঞ্চার। এখানে খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। মেঘের স্বর্গরাজ্যে যেন কিছুক্ষণের জন্য আপনি নিজেকেই হারিয়ে ফেলবেন!

হিমালয়ান জ্যু

পদ্মজা নায়ডু চিড়িয়াখানাতে দেখতে পাবেন তিব্বতি নেকড়ে, স্নো লিওপার্ড, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, রেড পান্ডা আরও কত প্রাণী। এছাড়া আরও একটি জ্যু আছে দার্জিলিং শহরেই, নাইটিঙ্গেল পার্ক। দার্জিলিংয়ের এই চিড়িয়াখানাগুলোতে এমন অনেক প্রাণী ও পাখি দেখবেন যেগুলো দেশের অন্য কোথাও নেই।

হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেট

ছবির মতো সুন্দর এই চা বাগান থেকে দার্জিলিংয়ের প্যানোরোমিক ভিউ পাবেন। সেই সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না! এটি দার্জিলিংয়ের দ্বিতীয় প্রাচীনতম টি স্টেট। দার্জিলিং শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে হিল কার্ট রোডের নিচে এই বাগানটি অবস্থিত।

রক গার্ডেন

দার্জিলিং থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রক গার্ডেন। ছোট্ট হ্রদ, কংক্রিট দিয়ে নির্মিত ধাপে ধাপে সিঁড়ি, সাজানো বাগান, ঝর্ণা- সব মিলিয়ে জায়গাটি আপনার বেশ ভালো লাগবে। ছবি তোলার জন্য এই জায়গাটি কিন্তু দারুণ। গঙ্গা মায়া পার্ক এর খুব কাছেই, সেখান থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন।

মনেস্ট্রি ও প্যাগোডা

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ঘুম মনেস্ট্রি, এটি বেশ পপুলার ট্যুরিস্ট স্পট। মঠে মৈত্রেয় বুদ্ধের একটি ১৫ ফুট লম্বা মুর্তি আছে। Japanese Temple & Peace Pagoda বেশ ভালো লাগবে। স্থাপত্যশৈলীর ক্লাসিক জাপানি ধাঁচ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

এছাড়াও আরও অনেক কিছুই দেখার আছে। হাতে সময় থাকলে ঘুম স্টেশন, মিউজিয়াম, আভা আর্ট গ্যালারি, সেন্ট জোসেফ স্কুল, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখতে পারেন। টয় ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন। সব মিলিয়ে ৩/৪ দিন সময় নিয়ে গেলেই বেশ ভালোভাবে জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।

যা যা খাবেন

ট্যুরে যেয়ে সেখানকার ট্র্যাডিশনাল ফুড ট্রাই না করলে যেন ট্যুর কমপ্লিটই হয় না। দার্জিলিয়ে বাঙালি, নেপালি, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। স্ট্রিট ফুড দার্জিলিংয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। দামটাও একদম হাতের নাগালে। মল রোড বরাবর অনেক ফুড কার্ট পাবেন সন্ধ্যার দিকে। এছাড়া বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট আছে। এমনকি এখানে মুসলিম রেস্টুরেন্টে আপনি বিফ আইটেমও পাবেন।

চিকেন মোমো, ভেজিটেবল মোমো, পাকোড়া, চাওমিন, থুকপা (স্যুপি নুডলস), সেকুয়া (নেপালি কাবাব), ভেজ হাক্কা নুডলস, আলুর দম এগুলো মাস্ট ট্রাই আইটেম। স্থানীয় রেস্টুরেন্টে নেপালি থালি, ভেজ থালি, পাওভাজি, ছোলা ভাটুরা এগুলো পেয়ে যাবেন। ব্রেকফার্স্টে আলু পরোটা, লুচি-আলুর দম, ডাম্পলিং স্যুপ এগুলো খেতে পারেন। আর দার্জিলিং টি তো আছেই!

দার্জিলিয়ে শপিং

শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মল রোড শপিংয়ের জন্য বেস্ট প্লেস। এখানে আপনি নেপালি শাল, পেইন্টিংস, হ্যান্ডমেড শোপিচ, পুঁথির নেকপিস, হ্যাট, জ্যাকেট এগুলো সবই পেয়ে যাবেন। কম বাজেট স্ট্রিট শপিং করতে পারবেন বাতাসিয়া লুপে। ফ্যান্সি জুয়েলারি, হোম ডেকর আইটেম, হাতে বানানো ব্যাগ এগুলো পাবেন এখানে। দার্জিলিং ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি প্যাকেট পাবেন মোটামুটি সব শপেই। এছাড়াও দার্জিলিয়ে বিগ বাজার (সুপার শপ) আছে, সেখান থেকেও শপিং করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

ট্যুরিস্ট এরিয়া হওয়াতে এখানে বিভিন্ন রেঞ্জের হোমস্টে, আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউজ আছে। দার্জিলিংয়ে ক্লক টাওয়ার ও মল রোডের আশেপাশে অনেক হোটেল আছে, দরদাম করে উঠতে পারেন। পিক সিজনে মানে এপ্রিল-জুন ও অক্টোবর-ডিসেম্বরে রুম রেন্ট একটু বেশি নিতে পারে। তবে আগে থেকে বুকিং না করে গেলেও থাকার জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। যদি মাউন্টেইন ভিউ রুম নিতে চান, তাহলে আগেই হোটেল রিসেপশনে কথা বলে নিবেন।

কিছু পরামর্শ

  • পাহাড়ি রাস্তায় মোশন সিকনেস হতে পারে তাই বমির মেডিসিন সাথে রাখবেন
  • শীত পোশাক সাথে নিয়ে যাবেন কারণ সারাবছরই সেখানে ঠান্ডা থাকে
  • বেসিক সেলফ কেয়ার অ্যাসেনশিয়ালস ক্যারি করবেন
  • দার্জিলিং খুবই পরিচ্ছন্ন শহর, তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন
  • বর্ষার সিজনে পাহাড়ি এলাকা ভ্রমণ না করাই ভালো

দার্জিলিং ভ্রমণ করুন কম খরচে, সে বিষয়ে আপনারা কিছুটা হলেও আইডিয়া পেয়েছেন আশা করি। তাহলে প্ল্যান করে ফেলুন তাড়াতাড়ি। গ্রুপ ট্যুর হোক বা কাপল ট্যুর, মুগ্ধতায় কেটে যাবে আপনার ছুটির দিনগুলো! আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।

প্রেম ও ছলনার গল্প নাটকে – নিদ্রা দে নেহা যা বল্ল

কালো ঘন চুল পেতে ম্যাজিকাল হেয়ার অয়েল

ফেসবুক পেজ

মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

পায়ের

পায়ের পেশিতে টান লাগলে যেটি করতে পারেন

পায়ের পেশি টান লাগা কমন রোগ হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে কমবেশি অনেকেরই কিছু না কিছু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *