শিশুর ওজন নিয়ে অনেক মায়েরা চিন্তায় থাকেন। একটি সুস্থ, পূর্ণ মেয়াদে বুকের দুধ খাওয়ানো নবজাতক তাদের প্রথম কয়েক দিনে জন্মের সময়ের ওজনের ৭ থেকে ৮ শতাংশ (বা একটু বেশি) কমে যাওয়া স্বাভাবিক। যখন তারা ২ সপ্তাহ বয়সে পৌঁছাবে, বেশিরভাগ নবজাতক তাদের জন্মের ওজন ফিরে পাবে। প্রথম বছরের শেষ নাগাদ তাদের ওজন স্বাভাবিকভাবে তিনগুণ বেড়ে যাবে। কখনও কখনও একটি শিশুর ওজন প্রত্যাশা অনুযায়ী নাও বাড়তে পারে। শিশুর ওজন কেন বাড়ছে না এবং কীভাবে সমস্যাটি সমাধান করা যায় সে সম্পর্কেই জানবো আজকের আর্টিকেলে।
শিশুর ওজন না বাড়ার কারণগুলো জানি
শিশুর ওজন যে কারণে বাড়ছে না
কিচ্ছুক্ষণ পর পর নবজাতককে খাওয়ানো, ডায়াপার পরিবর্তন ও সারা রাতের নির্ঘুম জার্নিতে আপনি হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন এরই মাঝে সপ্তাহ দুয়েক সময় পেরিয়ে গেছে এবং আপনার শিশুর ওজন বাড়ছে না। শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য তার দেহের প্রয়োজনীয় মোট ক্যালোরির চেয়ে অবশ্যই তাকে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার তিনটি কারণ হলো:
- শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করছে না।
- শিশু যে ক্যালোরি গ্রহণ করে, তার দেহ সেটা শোষণ করছে না
- শিশুর দেহে ক্যালোরি বেশি বার্ন করছে।
পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করা
ব্রোকলি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা জানেন
ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ক্ষতিকর কি
ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ক্ষতিকর কি
স্বাস্থ্যকর পূর্ণ মেয়াদে বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুরা সাধারণত প্রতি ২ থেকে ৩ ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ খায়। ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুদের প্রতি ৩ ঘন্টায় ১.৫ থেকে ২ আউন্স ফর্মুলা প্রয়োজন। তাদের পেট বড় হওয়ার সাথে সাথে খাওয়ানোর সময় বাড়তে থাকে, কিন্তু কিছু শিশু তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি নাও পেতে পারে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন এমন হয়?
ঘুমন্ত শিশু
নবজাতক ঘুমিয়ে থাকতে পারে, তাই আপনি যদি আপনার শিশুকে জাগানোর চেষ্টা করেন বা তাকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের পায়ে আলতো করে সুড়সুড়ি দিন, কম্বল সরিয়ে ফেলুন বা ডায়পার খুলে সহজ করে পরিয়ে দিন। অনেক সময় দেখা যায় ঘুমের কারণে শিশু পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারে না।
শেখার প্রচেষ্টা
বাচ্চাদের শিখতে হবে ফিডিং, শ্বাস নেওয়া ও গিলতে পারা। এটি মানিয়ে নিতে কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সময় নিতে পারে। আপনার দিক থেকে নিশ্চিত করুন যে দুধ খাওয়ানোর সময় তারা আপনার সাথে গভীরভাবে লেগে আছে। ভালভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শক্ত খাবার শুরু করা কঠিন
শিশু বিশেষজ্ঞরা ৬ মাস বয়সের পর থেকে শক্ত খাবার (Solid food) শুরু করার পরামর্শ দেন। সলিড খাবার শুরু করার পরেও তাদের বেশিরভাগ ক্যালোরি প্রথম বছরে বুকের দুধ বা ফর্মুলা থেকে আসবে। কখনও কখনও শক্ত খাবার শুরু করার সময় ওজন বৃদ্ধি কিছু কম হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু ঘন ঘন বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করার পরেও ঘন ঘন অন্য খাবারও খাচ্ছে।
শিশু যে ক্যালোরি গ্রহণ করে তা দেহে শোষণ না হওয়া
কেন এটি ঘটতে পারে, এই বিষয়ে গবেষণায় জানা গেছে-
খাদ্যে অ্যালার্জি ও সংবেদনশীলতা
অল্প সংখ্যক শিশুর খাদ্যে অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা থাকে। আপনার শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গ্লুটেন ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খাদ্য-সংবেদনশীল শিশুর জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে এবং তাদের অন্ত্রে জ্বালাতন করতে পারে, যার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ান এবং আপনার শিশু সংবেদনশীলতায় ভুগছে, তাহলে তার খাদ্যতালিকা পরিবর্তন ডায়রিয়া বন্ধ করতে পারে কিনা সেটা জানতে হলে শিশুর খাবারের প্ল্যান পরিবর্তন করতে পারেন। যদি শিশুকে ফর্মুলা খাওয়ানো হয়, তাহলে ফর্মুলা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।
জন্ডিস
গবেষণায় জানা যায়, গুরুতর জন্ডিসে আক্রান্ত শিশুদের ওজন কমার সম্ভাবনা বেশি। কিছু শিশুর অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন কারণ তারা যে ক্যালোরি গ্রহণ করে তা দ্রুত বিপাক করে।
প্রি-ম্যাচুয়র শিশু
৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের পূর্ণ মেয়াদী শিশুদের চেয়ে বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়।
শ্বাসকার্যের সমস্যা
শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যায় ভুগছে এমন শিশুদের অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য আরও ক্যালোরির প্রয়োজন হয়, যা তাদের নিজেদেরকে পরিশ্রম করতে এবং টিস্যু বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
হৃদরোগ
গবেষণা দেখায় যে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা ৪০% বেশি শক্তি ব্যয় করে। ক্ষুধামান্দ্য হলে তাদের ওজন বাড়াতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়।
শিশুর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করুন
স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা
আপনার শিশুর যথেষ্ট ওজন বাড়ছে কিনা তা বের করার চেষ্টা করা আপনার চিন্তার কারণ হতে পারে। প্রতিটি ফিড সম্পর্কে চাপ না নিয়ে একজন নবজাতকের পিতামাতা হিসেবে প্রতিটি দিন সম্পর্কে ভাবার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট অপশন আছে। এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম ধাপ হল, আপনার শিশুকে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে চেকআপে নিয়ে যান।
শিশুর বৃদ্ধি নিরীক্ষণ
শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিরীক্ষণ করতে শিশু চিকিৎসকরা গ্রোথ চার্ট ব্যবহার করেন। একজন সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে এবং মেয়ের ওজন বিভিন্ন হারে বাড়ে। বুকের দুধ খাওয়া শিশু সাধারণত জীবনের প্রথম বছরে ফর্মুলা খাওয়া শিশুদের তুলনায় ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে। আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে শিশুর ওজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গ্রোথ স্ট্যান্ডার্ড চার্টের সাথে পরিমাপ করা উচিত, কারণ এই চার্টগুলো বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে। চিকিৎসকরা মায়েদের জানিয়ে দেন, শিশু যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ বা তার বেশি প্রস্রাব করে থাকে তবে সে ভালো অবস্থায় আছে।
সাফল্য লাভে ব্যর্থতা
যখন শিশুর পর্যাপ্ত ওজন বাড়ে না, তখন তাদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে তাদের যেমন লম্বা হওয়া উচিত তেমন লম্বা নাও হতে পারে এবং হাঁটার মতো দক্ষতা অর্জনে বিলম্বিত হতে পারে। তাদের বেড়ে উঠা একইভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
আপনার শিশুর ওজন বাড়াতে যেভাবে সাহায্য করতে পারেন
প্রথম ধাপ হল, আপনার শিশুর প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পেতে বাধা সৃষ্টি করে এমন সমস্যা দূর করা। আপনার শিশুর যদি গিলতে অসুবিধা হয়, খাবারের মধ্যে বমি হয়, খাবারে অ্যালার্জি বা রিফ্লাক্স বা ডায়রিয়া হয় বলে মনে হয়, তবে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
এছাড়া, আপনি যদি মনে করেন শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে চিন্তা করবেন না – এটি বাড়ানোর কৌশল রয়েছে। শিশুকে আপনার কাছে রাখুন, প্রতি ঘন্টা বা দুই ঘন্টা পর পর বুকের দুধ খাওয়ান ও বিশ্রাম নিন। আপনি নিজে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করুন। এতে দুধের উৎপাদন বাড়বে।
মনে রাখবেন শিশুর ওজন নিয়ে টেনশন করার আগে খেয়াল করুন শিশু সুস্থ কিনা। শিশুরা যদি সুস্থ থাকে এবং নির্দিষ্ট গতিতে বাড়তে থাকে, তাহলে তারা স্থুলাকার এবং লম্বায় বাড়লো কিনা এসব নিয়ে আপনার চিন্তা করার দরকার নেই। শিশু সঠিক গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। সকল শিশুই হাসুক মায়ের কোলে।
ফেসবুক পেজ
আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।