আপনি কী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম জানেন? ভাবছেন এগুলো ব্যবহারের আবার সঠিক নিয়ম আছে নাকি! হ্যা, নিশ্চয় আছে। আর এই নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিন
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার আমাদের চুলকে পরিস্কার, ঝলমলে, মসৃণ করে কিন্তু এই আকর্ষনীয় ফলাফল পেতে হলে এদের সঠিক প্রয়োগ জানা জরুরী তা না হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই, ছোট খাট কিছু বিষয় মাথায় রেখে আর নিয়ম মেনে এই প্রসাধনীগুলো ব্যবহার করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিশ্চয় পাবেন।
আসলে সুস্থ চুলের পুষ্টি যোগাতে আর যাই হোক না কেন, চুল পরিষ্কার থাকা চাই! কাজেই চুল ধোয়ার সময় আগে ও পরে যদি কিছু নিয়ম মেনে চলেন, তা হলে শ্যাম্পুর পুরো ফায়দাটা পাবে আপনার চুল। অবাক হচ্ছেন? তা হলে নিজেই জেনে নিন
শ্যাম্পু ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
শক্ত, মজবুত, ও ঝরঝরে চুলের প্রথম শর্ত হল পরিস্কার চুল। আর চুল পরিস্কারের জন্য প্রয়োজন ভালো মানের প্রসাধনীর। তবে শুধু ভালো মানের ব্যবহার করলেই হবে না, সাথে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে তবেই এর আসল সুবিধা পাওয়া যাবে। চলুন শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা যাক।
চুলে স্টিম করুন
চুলে স্টিম করলে চুলের গভীর থেকে তেল, ময়লা, খুসকি ও জমে থাকা ধুলাবালি বের হয়ে আসে। একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে অতিরিক্ত পানি চিপে ফেলে গরম তোয়ালে মাথায় ২০ মিনিটের জন্য জড়িয়ে রাখুন। এর পর শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু নির্বাচন করুন
সবার চুলের ধরন এক নয়। আপনার চুল তৈলাক্ত, শুষ্ক নাকি মিশ্র তা বুঝে পন্য কিনুন। চুলের ধরনের সাথে সাথে কোয়ালিটির দিকেও নজর দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় প্রাকৃতিক বা হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করলে। কারন এই গুলোতে সালফেট থাকে না, তাই এগুলো স্ক্যাল্পের জন্যেও নিরাপদ।
এখন প্রশ্ন হল আপনার চুলের জন্য ভালো মানের প্রসাধনী কোথায় পাবেন? আপনার চুলের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে আরোগ্যতে। চুলের জন্য বাজারের সেরা শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার সহ আরো নানা ধরনের প্রসাধনী পন্য আরোগ্য থেকে কিনতে পারবেন বাজারের সেরা দামে।
আগে চুল আঁচড়ে নিন
শ্যাম্পু করার আগে চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিলে চুলে জট বেধে যায় না। স্টিম নেয়ার পর চুল ভালোভাবে মাসাজ করে করে নিলে মাথার ত্বকের ময়লাও উঠে আসবে এবং গোড়া আলগা চুলও উঠে যাবে ফলে ধোয়ার পর চুলে জট কম হবে।
ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন
চুলের জন্য গরম পানি বেশ ক্ষতিকর। তাই বছরের সব সময়ই স্বাভাবিক তাপমাত্রা অথবা কুসুমগরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া উচিত। এতে চুল রুক্ষ হওয়ার ভয় থাকবে না এবং চুল চকচকে ও উজ্জ্বল হবে।
মাথার ত্বকে লাগান
চুলে না লাগিয়ে শুরুতে মাথার ত্বকে লাগান। কারন চুলে শ্যাম্পু দিলে চুলের স্বাভাবিক তেলের স্তরটি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তাই প্রথমে ত্বকে লাগান এরপর সেখান থেকে ঘষে ফেনা করে বাকি চুলগুলো পরিস্কার করে নিন।
শ্যাম্পু প্রতিদিন নয়
হার্বাল বা সাধারন শ্যাম্পু যেটাই হোক না কেন, তাতে কোন না কোন রাসায়নিক পদার্থ থাকবেই। তাই প্রতিদিন ব্যবহার করলে চুলের স্বাভাবিক কোমলতা নষ্ট হয়ে রুক্ষ ও শক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই সপ্তাহে দুই ব্যবহার করায় যথেষ্ট।
দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার নয়
ভেজা চুল নরম থাকে এবং সহজেই গোড়া থেকে উঠে আসে অথবা ছিড়ে যায়। তাই দীর্ঘ সময় ধরে চুল ভেজা রাখা উচিত নয়। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম হল চুল ভেজানোর ১৫ মিনিটের মধ্যেই করে ফেলা।
কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়মাবলী
শ্যাম্পুর ব্যবহার তো গেল, এবার আসি কন্ডিশনারের ব্যবহারে। রুক্ষ, শক্ত চুলকে নরম ও ঝলমলে করতে সাহায্য করে এই হেয়ার কেয়ার পণ্যটি। কিন্তু আপনার ভুল প্রয়োগে এটি চুলকে আর শক্ত করে দিতে পারে এমনকি চুল পড়া অনেক হারে বেড়েও যেতে পারে। তাই সঠিকভাবে কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম জানা খুবই জরুরী।
চুলের ধরন বুঝে
চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার নির্বাচন করা উচিত। কারো চুল বেশী তৈলাক্ত আবার কারো চুল শুষ্ক। আবার অনেকের চুল কালার করা বা রিবন্ডিং করা থাকে। সেই সব চুলের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। তাই কেনার সময় চুলের ধরন বিবেচনা করতে ভুলবেন না।
শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
কন্ডিশনার ব্যবহারের আগে চুলে শ্যম্পু করা উচিত। এটি চুলের গোড়া থেকে এবং মাথার ত্বক থেকে ময়লা পরিস্কার করে। তাই আগে চুলের ময়লা ও অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দূর করে নিয়ে তারপর এটি ব্যবহার করা উচিত। তবে একান্তই এটা করা না গেলে চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে।
ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন
কন্ডিশনার এর উপকারিতা পেতে ঠান্ডা পানিতে ব্যবহার করা উচিত। গরম পানির কারনে চুল নরম ও মসৃণ হওয়ার পরিবর্তে আরো শক্ত ও খরখরে হয়ে যেতে পারে। ঠান্ডা পানি বা কুসুম গরম পানি চুলের ড্যামেজ রোধ করতে সাহায্য করে।
আগে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন
চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করার আগে পানি দিয়ে ভালোভাবে আগে শ্যাম্পু ধুয়ে ফেলুন। চুলে ফেনা থেকে যাওয়া অবস্থায় অন্য কিছু ব্যবহার করা উচিত না। যতক্ষন পর্যন্ত না পরিস্কার পানি বের হয়, ততক্ষন পর্যন্ত চুল ধুয়ে তারপর পরের প্রসাধনী লাগাতে হবে।
ভেজা চুলে কন্ডিশনার লাগান
চুলের অতিরিক্ত পানি চিপে ফেলুন তবে চুল শুকিয়ে নিবেন না। ভেজা অবস্থাতেই এটি লাগাতে হবে। হাতে পরিমান মত ঢালুন এবং আগার দিক থাকে গোড়ার দিকে লাগাতে থাকুন।
সেট হতে সময় দিন
কন্ডিশনার সেট হতে কমপক্ষে ৩-৫ মিনিট সময় দিন। সাথে সাথে ধুয়ে ফেলবেন না। বেশিরভাগ প্রসাধনী পন্যের বোতলের গায়ে নির্দেশনা দেয়া থাকে। ব্র্যান্ড ও ধরন ভেদে এই সময় কমবেশি হতে পারে তাই বোতলে থাকা নির্দেশনা অনুস্মরণ করা উচিত।
পরিস্কারভাবে ধুয়ে ফেলুন
নির্ধারিত সময় পার হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিস্কারভাবে ধুয়ে ফেলুন। পিচ্ছিল পানি বের হওয়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চুল ধুতে থাকুন। চুল ভালোভাবে না ধুয়ে ফেললে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না।
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের সাধারণ ভুল
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার আমরা সবাই ব্যবহার করি। কিন্তু কিছু অজানা ভুলের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুক্ষীন হই বেশি। চলুন দেখি এই ভুলগুলো কী কী-
মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার
চুল পরিস্কার করার জন্য ও মসৃণ করার জন্য অনেকেই ঘন ঘন শ্যাম্পু ও অতিরিক্ত মাত্রায় কন্ডিশনার লাগান যার দুটোই চুলের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তাই এগুলো সপ্তাহে ২ দিন বড় জোর ৩ দিন করা উচিত আর ব্যবহারবিধি অনুস্মরণ করে লাগানো উচিত।
চুলের ধরন বুঝে পন্য ব্যবহার না করা
আমরা অনেকেই চুলের ধরন না বুঝেই প্রসাধনী কিনে ফেলি। ফলে চুল ড্যামেজ হতে বেশি সময় লাগে না। আপনার বন্ধুর চুলে যে প্রসাধনী ভালো ফল দেয় তা আপনার চুলের জন্য জন্য নাও দিতে পারে। তাই আগে চুলের ধরন বুঝুন তারপর কিনুন।
পানির তাপমাত্রা খেয়াল না রাখা
গরম পানি চুলের রুক্ষতাকে অনেক বেশী বাড়িয়ে দেয় তাই চুল ধোয়ার সময় গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকেই গরমকালে ঠান্ডা পানি এবং শীতকালে গরম পানি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। তবে চুলের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি সবচেয়ে নিরাপদ।
প্রয়োগবিধি না মানা
শ্যাম্পু প্রথমে স্ক্যাল্পে ঘষে ফেনা তুলতে হয়, এরপর তা পুরো চুলে মাখিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হয়। অপরদিকে কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় না দিয়ে আগা থেকে সবটুকু চুলে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োগবিধি না মেনে ব্যবহার করলে লাভের পরিবর্তে ক্ষতিই হবে বেশি।
শ্যম্পু করার পরে ঘষে মোছা
ভেজা চুল ও এর গোড়া অনেক নরম থাকে। তাই ভেজা অবস্থায় ঘষে মোছা ঠিক না। এছাড়া অতিরিক্ত পানি দূর করার জন্য গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়াও ঠিক না। এতে চুল ছিড়ে যেতে পারে এমনকি গোড়া থেক চুল উঠেও আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী চুলের যত্ন
চুলের যত্নে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের সঠিক ব্যবহার তো জানলাম, চলুন দেখি বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে কি পরামর্শ দিচ্ছেনঃ
চুলে কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না।
চুলের ধরন বুঝে তেল, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
খুশকি দূর করার জন্য নখ দিয়ে খুঁটে তোলা যাবে না, কেবলমাত্র অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ও তেল ব্যবহার করতে হবে।
শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
ভেজা চুলে বাইরে যাওয়া যাবে না, এতে স্ক্যাল্পে ধুলাবালি জমবে।
আঁচড়ানোর জন্য মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন, এতে চুলের জট দ্রুত খুলে যাবে।
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
চুলের ও ত্বকের যে কোন প্রসাধনী ব্যবহার সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। শ্যম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
এসব ব্যবহারের আগে চুল আঁচড়ে নিতে ভুলবেন না। এতে চুল জট তৈরি হবে না।
শ্যাম্পু লাগাতে হবে গোড়া থেকে আর কন্ডিশনার লাগাতে হবে আগা থেকে, এই পদ্ধতি ভুলে গেলে চলবে না।
চুল পরিস্কারের জন্য খুব বেশী ঘষাঘষি করার প্রয়োজন নেই, আলতোভাবে মাসাজ করলেই হবে।
অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে, হেভী রাসায়নিকের নয়।
সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না তবে চুল খুব বেশি তৈলাক্ত হলে এক দিন পর পর করা যেতে পারে।
ডিপ কন্ডিশনিং মাসে একবারই যথেষ্ট।
উপসংহার
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়মগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। এগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আপনি আপনার চুলকে টেকশই, নরম, কোমল, ও ঝলমলে করে তুলতে পারবেন। আজই আরোগ্যতে থেকে আপনার প্রয়োজনীয় প্রসাধনীটি সংগ্রহ করুন এবং চুলের যত্নে লেগে পড়ুন। আমাদের আপডেট জানাতে ভুলবেন না!
চুলে কন্ডিশনার কিভাবে লাগাতে হয়?
উত্তরঃ একটি কয়েনের সমপরিমান কন্ডিশনার হাতের তালুতে নিয়ে চুলে আগা থেকে গোড়ার দিকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। তবে স্ক্যাল্পে লাগানয যাবে না।
সপ্তাহে কতদিন শ্যাম্পু করা উচিত?
উত্তরঃ সপ্তাহে ২-৩ দিন এর বেশী শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে আপনার চুল যদি অনেক বেশি তৈলাক্ত হয় তবে এক দিন পর পর করতে পারেন।
কন্ডিশনার চুলে কতক্ষণ রাখা উচিত?
উত্তরঃ সাধারণত কন্ডিশনার ৩ থেকে ৫ মিনিটের বেশি রাখা উচিত নয়। তবে ব্র্যান্ডভেদে প্রয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। তাই বোতলের নির্দেশনা মেনে ব্যবহার করা উচিত।
ফেসবুক পেজ
আপনাদের কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।