বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি গ্রাম থেকে আসা একজন নারী খাদেজা (আসল নাম নয়) । ভালবেসেছেন তারই মত একজন নারীকে । আর সে কারণেই তাকে পড়তে হয়েছে নানা হয়রানিতে । জেলও খাটতে হয়েছে ।একটি মেয়ে আরেকটি মেয়েকে ভালোবাসে কেনো ? সেই ভালবাসার গল্প বিবিসিকে অকপটে বলেছেন খাদেজা ।
২০১৬ সালের কথা । খাদেজার বয়স তখন ২০ বছর । পড়ালেখার জন্য ঘর ছাড়ার পর এমন একজনের সাথে তার দেখা হল যাকে নিয়ে জীবনের বাকিটা কাটাতে চাইলেন তিনি । কিন্তু সমস্যা হল সেই ব্যক্তিটিও একজন নারী। কিন্তু বাংলাদেশে সম লিঙ্গের বিয়ে গ্রহণযোগ্য নয় । ফলে নিজের সুখের বদলে তাকে পড়তে হয়েছে অপহরণের অভিযোগের মুখে । দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পিরোজপুর শহরের একটি গ্রাম থেকে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে খাদেজা চলে আসেন জেলা শহরে । পরিবারের সবচেয়ে বুদ্ধিমতী সন্তানটি সংসারের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবেন-এই আশায় তার স্কুল শিক্ষক বাবা তাকে বাড়ি থেকে দূরে পাঠাতে রাজি হন ।
পিরোজপুরে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা শুরু হয় খাদেজার । সেখানে হিন্দু ধর্মানুসারী একজন ব্যবসায়ী মৃণালের (আসল নাম নয়) অনুরোধে তার মেয়ে মালবীকে (আসল নাম নয়) পড়াতে শুরু করেন খাদেজা । এরপর ১৬ বছর বয়সী মালবীর সাথে সম্পর্ক তৈরি হয় খাদেজার ।
খাদেজার জিনস আর টি-শার্ট গতানুগতিক গ্রাম্য সমাজে কিছুটা দৃষ্টিকটু বলে বিবেচিত হলেও, মৃণালের পরিবার তাকে বেশ পছন্দই করতো ।
এই বাড়িতে কিছু দিন থাকেন দুজনে । কিন্তু এই সমাজে দুটো মেয়ের প্রেম কেউ মেনে নেবে না সেটা ভালই জানতেন মালবী এবং খাদেজা । ফলে তারা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । ২০১৬ সালেরই জুলাই মাসে পিরোজপুরেরই ১৭শ শতকের একটি মন্দিরে গিয়ে তারা মালা বিনিময় করে । হিন্দু বিয়ের রীতি অনুসারে মালবীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয় খাদেজা ।
এরপর তারা লঞ্চে করে বরিশালে চলে যান । সেখানে বাসা ভাড়া নেন ।
খাদেজার ভাষায়, “সেখানেই আমাদের বিবাহিত জীবন শুরু করি । আমরা সেখানে দেড় সপ্তাহের মত সময় ছিল আমাদের একসাথে কাটানো সবচেয়ে সুখের সময় ।”
এমনকি তারা যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার মালিকও তাদের দুটি মেয়ের এই প্রেমের সম্পর্কে অভিভূত হয়ে তাদের আশ্রয় দেন বলে জানান ।
তবে মালবীর বাবা মৃণাল থানায় গিয়ে খাজেদার বিরুদ্ধে তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ।
মালবীর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পুরো বিষয়টি সাজানো । মালবীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি তার বাবা ও বোনের ।
মালবীর বোন বলছেন, তার বোনকে চায়ের সাথে এমন কিছু মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল যার ফলে সে চেতনা হারিয়ে ফেলেছিল ।
এদিকে বরিশাল শহর ছেড়ে খাদেজা এবং মালবী চলে যান ঢাকায় ।
এভাবে পিরোজপুর ছাড়ার পর তিন মাস কেটে যায়। এমনই এক সময় পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব তাদের খুঁজে বের করে ।
খাদেজাকে গ্রেপ্তার করে পিরোজপুর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় । আর মালবীকে তুলে দেয়া হয় তার পরিবারের কাছে ।
এরপর খাদেজাকে পড়াতে হয় বিদ্রূপের মুখে । তাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, “তোমাকে দেখতে তো খুব নিষ্পাপ মনে হয় । তোমার মনটা এত কুৎসিত কেন?”
বাংলাদেশে সমকামীদের একটি সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পরিচালক ফরিদা বেগম বলছিলেন, এটা শুধু দুই নারীর প্রেমের ঘটনাই নয়, একইসঙ্গে এখানে হিন্দু-মুসলিম দুই ধর্মের প্রেমের বিষয়ও রয়েছে । ফলে বিষয়টি কিভাবে সামলাতে হবে সেটি পুলিশ এমনকি সানজিদার আইনজীবীও বুঝে উঠেতে পারছিলেন না ।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর আড়াই মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান খাদেজা । জেলের ভেতর নানা ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হয় বলে জানান তিনি । তবে সবচেয়ে কষ্টকর ছিল তার লিঙ্গ পরীক্ষার বিষয়টি, জানান খাদেজা ।
তিনি বলেন, “নারী পুলিশ সদস্যদের পাঠানো হতো আমি ছেলে না মেয়ে সেটি দেখতে । সে এসে আমার সারা শরীরে হাত দিয়ে দেখতে থাকে । এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে লজ্জাজনক পরিস্থিতি । এতটাই নির্মম ছিল যে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করতো । তারা তিনবার একই কাজ করে ।”
তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিষয়টিকে দুর্ধর্ষ এবং রোমাঞ্চকর প্রেমের গল্প হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করে ।
সাংবাদিকদের মালবী একটি বিবৃতি দেন । সেখানে বলা হয়, “একটি ছেলে যদি একটি মেয়েকে ভালবাসতে পারে । তাহলে একটি মেয়ে আরেকটি মেয়েকে ভালবাসতে পারবে না কেন?”
তবে মালবীর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য দেয়র কথা নাকচ করেছে তার পরিবার ।
তার মা পান চিবুতে চিবুতে জানান, ছোটবেলায় খাদেজার ওপর জ্বিনের আছর ছিল । এরপর তাকে তাবিজ দেন একজন হুজুর ।
কেমন জুটির প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়
আশাকরি আমাদের টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।
যদি সমান্যতম কাজে লাগে তবে একটা ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না।
আর নিয়মিত টিপস পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
ফেসবুক পেজ
আমাদের সাইটে কোন প্রকার অশ্লীল আর্টিকেল দেওয়া হয় না।
মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।
এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,
আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব