Friday , 18 October 2024

সমাজের উঁচু-নিচু সবার অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে ইসলাম কি বলে

মহানবী (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় পরিচালিত রাষ্ট্রে ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান প্রবর্তন ও মাঠপর্যায়ে তা প্রয়োগ করেছিলেন। যে অর্থনৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি সুনিশ্চিত হয়। যাঁর অনুসরণ একটি কল্যাণময় ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানে যুগান্তকারী সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। সব অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসানের সাথেসাথে সামাজিক ভেদাভেদেরও অবসান ঘটবে।

 

অর্থনৈতিক
সমাজের উঁচু-নিচু সবার অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে ইসলাম কি বলে

 

 

সমাজের উঁচু-নিচু সবার অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে ইসলাম কি বলে

 

অর্থব্যবস্থায় শ্রেণীবৈষম্য

বর্তমান সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় শ্রেণীবৈষম্য অত্যন্ত তীব্র ও শক্তিশালী। এই ব্যবস্থায় শ্রমিক, মালিক, প্রভু, ভৃত্য, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকল ক্ষেত্রে শ্রেণী বৈষম্যের আধিক্য। এক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)-এর অর্থনৈতিক শিক্ষা সম্পূর্ণ নায্য। রাসুল (সা.) শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩)
তিনি বিশ্ব শ্রমিক অধিকারের যে আইনি মূলনীতি ঘোষণা করেছেন তা হলো, তিনি বলেন, ‘তুমি নিজের শ্রমিকের জিম্মা থেকে যতটুকু কাজ হালকা করবে, তোমার মিজানের পাল্লায় সেটুকু নেকি যোগ হবে।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৩১৪)

মহানবী সা. এর প্রদর্শিত বৈষম্যহীন সার্বজনীন অর্থব্যবস্থা

মহানবী (সা.) মদিনায় যে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, সেখানে মাত্র ১০ বছরে উন্নয়নমুখী, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। সমাজের উঁচু থেকে নিচু শ্রেণী সবার জন্য অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অর্থব্যবস্থার কিছু দিক হলো—

১. জাকাত ব্যবস্থা : মহানবী (সা.) ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগার হিসেবে বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার অন্যতম আয়ের উত্স ছিল জাকাত। জাকাত হলো ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার। যার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি অভাব থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধশালী সমাজ বিনির্মান করা।

২. সদকাতুল ফিতর : পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর বিত্তশালীদের ওপর গরিব-দুঃখীদের জন্য নিদিষ্ট হারে বিশেষ দানের নির্দেশনা হলো সদকাতুল ফিতর। এটা ব্যক্তিগত দান হলেও মহানবী (সা.) মদিনা রাষ্ট্রে তা আদায় করে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করেছিলেন।

মুমিন কেন বিপদে ভেঙে পড়ে না

ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব ও মূলনীতি কি

৩. মিনাহ : মিনাহ হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি মেকানিজম। এ মেকানিজমে উত্পাদনমূখী কোন সম্পদ অভাবী দরিদ্রকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিদান ছাড়া প্রদান করা হয়।

৪. সুদ প্রথার বিলুপ্তি : বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা সুদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনে শোষণ-বৈষম্যের বিস্তৃতি ঘটেছে। যার মাধ্যমে এক শ্রেণির পুঁজিপতির হাতে যাবতীয় সম্পদ কুক্ষিগত হতে থাকে এবং গরীবেরা ক্রমান্বয়ে আরো গরিব হয়ে ওঠে। এই সুদ হলো সামাজিক শোষণ-বৈষম্যের অন্যতম হাতিয়ার। ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় মহানবী (সা.) তা প্রদর্শন করেছেন। কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

৫. মোহর : মোহর হলো স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকার, যা বিবাহের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে স্বামী কতৃক স্ত্রীকে সম্মাননা হিসেবে প্রদান করা হয়। এই ব্যবস্থা সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যের আচরণকে ভেঙে দেয়। সামাজিক জীবন বৈষম্যহীন ও সৌহার্দপূর্ণ হয়।
৬. ফারায়েজ : ফারায়েজ হলো ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে অত্যন্ত ন্যায়ানুগ ও সুবিন্যস্ত পদ্ধতি। যা পালন করা হলে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটবে। সমাজে দারিদ্রতা বৃদ্ধি পাবে না এবং বৈষম্যহীনভাবে সবাই উপকৃত হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তাতে (সম্পদে) পুরুষদের জন্য নায্য অংশ আছে যা তার মা বাবা আত্মীয়স্বজন রেখে গেছে এবং মেয়েদের জন্য তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে যা তার মা বাবা ও নিকট আত্মীয় রেখে গেছে। কম-বেশি যাই হোক না কেন তাতে অলশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭)

মহানবী সা.-এর নির্দেশিত অর্থব্যবস্থা এনে দিতে পারে সুখ-সমৃদ্ধি ও গড়ে তুলতে পারে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।

ফেসবুক পেজ

এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন,

আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।

Spread the love

Check Also

কোরআনে

চেহারায় আঘাত করা কোরআনে নিষিদ্ধ

চেহারা মানবদেহের প্রধান একটি অঙ্গ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *